বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। আর ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। বিশ্বকাপের চলতি আসরে এই দুই চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিল আফগানরা।
১৫ অক্টোবর দিল্লিতে ২৮৪ রানের পুঁজি নিয়েও বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৯ রানের দাপুটে জয় পায় আফগানিস্তান। আজ নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আরেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে ২৮২ রানে থামিকে ৮ উইকেটের দাপুটে জয় পায় আফগানরা।
বিশ্বকাপের চলতি আসরে হট ফেভারিট ভারত এবং রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এই দুই দলের বিপক্ষে টানা হারের পর সোমবার আফগানিস্তানের সঙ্গেও হারে পাকিস্তান। হ্যাটট্রিক হারে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা কঠিন হয়ে গেল বাবর আজমদের।
সোমবার চেন্নাইয়ে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৮২ রান করে পাকিস্তান। টার্গেট তাড়ায় ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ও অধিনায়ক হাশতউল্লাহ শহিদির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৬ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের দাপুটে জয়ে ইতিহাস গড়ে আফগানিস্তান।
২৮৩ রানের টার্গেট তাড়ায় ইনিংসের শুরু থেকেই রীতিমতো তাণ্ডব চালান আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।উদ্বোধনীতে ২১.১ ওভারে ১৩০ রানের জুটি গড়েন তারা। রহমানউল্লাহ ৫৩ বলে ৯টি চার আর এক ছক্কায় ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরেন।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহের সঙ্গে ৭৪ বলে ৬০ রানের জুটি গড়ে ফেরেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। ইনিংস ওপেন করতে নেমে দলীয় ১৯০ রানে আউট হন ইব্রাহিম। তার আগে ১১৩ বলে ১০টি বাউন্ডারির সাহায্যে করেন ৮৭ রান।
এরপর রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদি তৃতীয় উইকেটে ৯৩ বলে ৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক জয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। ৭৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন রহমাত শাহ। ৬৫ রান করে ফেরেন ওপেনার নজিবুল্লাহ জাদরান। আর ৪৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন হাশমতউল্লাহ শহিদি।
সোমবার ভারতের চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে তারা। উদ্বোধনীতে ৫৬ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম–উল–হক। ২২ বলে ১৭ রানে ফেরেন ইমাম।
এরপর অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে ৭৪ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। ২২.২ ওভারে এক উইকেটে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১১০ রান। এরপর ৫৩ রানের ব্যবধানে পাকিস্তান হারায় ৩ উইকেট।
৭৫ বলে ৫টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫৮ রান করে ফেরেন আব্দুল্লাহ শফিক। চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৮ রানে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
এরপর চতুর্থ উইকেটে সৌদ শাকিলের সঙ্গে ৫৭ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন বাবর আজম। ৩৪ বলে ২৫ রানে ফেরেন সৌদ শাকিল।
পঞ্চম উইকেটে দলের সহ–অধিনায়ক শাদাব খানের সঙ্গে ৪৭ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন বাবর আজম।
৪১.৫ ওভারে দলীয় ২০৬ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক বাবর আজম। তার আগে ৯২ বলে ৪টি চার আর এক ছক্কায় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন বাবর। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার দ্বিতীয় ফিফটি। এর আগে ভারতের বিপক্ষে খেলেন ৫০ রানের ইনিংস।
বাবর আজম আউট হওয়ার পর সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে রীতমতো তাণ্ডব চালান ইফতেখার আহমেদ। ষষ্ঠ উইকেটে শাদাব খানের সঙ্গে ৪৫ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন ইফতেখার।
ইনিংস শেষ হওয়ার মাত্র ৪ বল আগে দলীয় ২৭৯ রানে ফেরেন ইফতেখার আহমেদ। তার আগে ২৭ বলে দুটি চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ইফতেখার আহমেদ।
ইনিংসের শেষ বলে আউট হন শাদাব খান। তার আগে ৩৮ বলে এক চার আর সমান ছক্কায় ৪০ রান করেন শাদাব।
বাবর আজম (৭৪) ও আব্দুল্লাহ শফিকের (৫৪) জোড়া ফিফটি এবং ইফতেখার আহমেদ (৪০) ও শাদাব খানের (৪০) শেষ দিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৮২ রান করে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের হয়ে ৪৯ রানে ৩ উইকেট নেন রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদ। ৫২ রানে ২ উইকেট নেন নাভিন উল হক।