‘ছেলে আমার বাড়িতে আসলে আমাকে না বলে বাড়ির চৌকাঠ পার হতো না। আমার ছেলে সব সময় আমাদের জন্য ভালো কিছু করার কথা বলত। মা–বাবাকে সুখের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলের। আজ আমার বাবাটা হারিয়ে গেল।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান (২৬)। তাঁর মা মরিয়ম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজ শনিবার কথাগুলো বলেন।
শনিবার বিকেলে রাশেদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার নওদাপাড়া (বড়চড়া) গ্রামে দেখা গেছে, তাঁর বাড়িতে মাতম চলছে। ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। মাকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর স্বজনেরা। পাশে বসে রাশেদুজ্জামানের বাবা তাঁকে শক্ত হতে বলছেন।
রাশেদুজ্জামানের বাবা আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। সে বাড়ির সবার খোঁজখবর নিয়েছে। আমার ছেলে ১০ মে বাড়িতে এসে তিন দিন থেকে ১৩ মে ঢাকায় ফিরে যায়। শ্যামলীতে ওই ভবনের ১৯ তলায় অফিসের একটি কক্ষে আবাসিক হিসেবে থাকত সে।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামলীতে ‘ডাটা সফট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন রাশেদুজ্জামান। একই প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি করেন তাঁর মামা মনিরুজ্জামান। মামার মাধ্যমেই ওই প্রতিষ্ঠানে তাঁর চাকরি হয়। ঘটনার রাতে ভবনে আগুন লাগলে সর্বশেষ রাত ১১টা ১৭ মিনিটে কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে রাশেদুজ্জামানের কথা হয়। পরে তাঁকে আর মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ভবন থেকে রাশেদুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করেন। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে লাশবাহী গাড়িতে করে রাশেদুজ্জামানের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
লাশ দাফনের পর থেকে রাশেদুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো যোগাযোগ বা আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেননি বলে জানা গেছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদুজ্জামানের মৃত্যুর সংবাদটি তিনি জানতেন না। আগামীকাল রোববার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাঁর পরিবারের যদি আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই সেই ব্যবস্থা করা হবে।