যে গতিতে নাশকতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে দেখা যায়, তদারকি বা বিচার শেষ করার ক্ষেত্রে তেমন গতি দেখা যায় না। যদিও মামলা দায়ের আর বিচারের ক্ষেত্রে পৃথক স্বাধীন দুটি পক্ষ কাজ করে থাকে। বিচারকরা বিচার করেন আর মামলা দায়ের ও তদারকির দায়িত্ব পুলিশের।
সূত্র জানায়, নাশকতার সাড়ে তিন শতাধিক মামলার বিচার গত ৯ বছরে একটিরও বিচার সম্পন্ন হয়নি। এসব মামলার মধ্যে অগ্নিসংযোগ, বাস পোড়ানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস, পুলিশ পিটিয়ে হত্যা, বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ ও পশু হত্যা ইত্যাদি ধরনের নাশকতামূলক মামলা রয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনায় পুলিশ দেশের বিভিন্ন থানায় এসব মামলা দায়ের করে।
বলা হচ্ছে, যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়া, সাক্ষী হাজির করতে না পারা এবং মামলার তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে লম্বা সময় দেওয়ায় মামলার যথাসময়ে বিচারের পথে অন্তরায় হচ্ছে। এসব মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। অনেক মামলার নাকি এখনো চার্জশিটও দেওয়া হয়নি।
এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে ইত্তেফাককে বলেন, কোন মামলা কী পর্যায়ে রয়েছে, কেন বিচার বিলম্বিত হচ্ছে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাশকতার মামলাগুলো দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে এসব বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনা ঘটে। নির্বাচন হতে না দেওয়ার জন্য এসব ঘটনা ঘটানো হয় বলে একটি রাজনৈতিক পক্ষ দাবি করে আসছে। এই সময় অনেক চলন্ত বাসে-পণ্যবাহী পরিবহনে আগুন, মানুষ ও পশু হত্যা, পণ্য জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয়। রেলের বগি আগুনে ধ্বংস করা হয়। রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। রাস্তা কেটে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রায় ১০০ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে ভোটকেন্দ্র ছিল সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রিসাইডিং অফিসারের ওপর হামলাও করা হয়।
সূত্র জানায়, ঘটনার বিপরীতে কমবেশি ৩৬০টির অধিক মামলা দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু এসব মামলার অনেকগুলো তিমিরেই রয়ে গেছে। অনেক মামলার তদন্তই নাকি শেষ হয়নি এখনো। আবার যেগুলোর প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তা অনেকটাই দায়সারা। শক্ত যুক্তি সাক্ষী দাঁড় করানো যায়নি। আবার যথাসময়ে সাক্ষী আদালতে উপস্থিত করতেও পারছে না তদন্তকারী সংস্থা। ফলে লম্বা লম্বা তারিখ পড়ছে মামলাগুলোর। ফলে দীর্ঘদিনেও মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায়নি।