আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টিএফআই সেলে গুম–নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি শুনানির আবেদন নাকচ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে সেনাকর্তাদের এক আইনজীবীর আবেদন শুনে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল–১ বুধবার এ আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে আসামিদের অব্যাহতির আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছে আদালত। বুধবার ছিল এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ পড়ে শোনান।
এরপর আসামিপক্ষে শুনানিতে এসে অ্যাডভোকেট তাবারক হোসেন বক্তব্য দেন। পরে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। তাদের সশরীরে হাজির থাকতে হবে। সকালে এই মামলার আসামি ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। দুপুরে তাদের মধ্যে সাতজনের আইনজীবী ড. তাবারক হোসেন ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদনের শুনানি করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল তাকে প্রশ্ন করেন তিনি ভার্চুয়াল হাজিরার শুনানি করবেন নাকি আসামিদের অব্যাহতির দরখাস্তের শুনানি করবেন। তখন আইনজীবী জানান, তিনি ভার্চুয়াল হাজিরার শুনানি করবেন, অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় নেবেন। ভার্চুয়াল হাজিরার শুনানিতে অ্যাডভোকেট তাবারকের কাছে ট্রাইব্যুনাল জানতে চায়, কোন গ্রাউন্ডে তিনি ভার্চুয়াল হাজিরা চান। অ্যাডভোকেট তাবারক বলেন, “তারা সেনা কর্মকর্তা। তারা যেভাবে মিডিয়ার ট্রায়ালের শিকার হচ্ছেন, এরপর বিচারে খালাস পেয়ে গেলে কমান্ড রেজিমেন্টে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হবে না।
তাদের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে।” ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে আমরা কোনো সেনা কর্মকর্তার বিচার করছি না। তারা সেনাবাহিনীর হলেও ওই সময় কাজ করতেন র্যাবে, যা পুলিশের একটি বাহিনী। আমরা সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষ – সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।” এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের বক্তব্য শুনতে চাইলে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “ট্রাইব্যুনাল আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।” তখন অ্যাডভোকেট তাবারক হোসেন বলেন, তাদের আবেদন মঞ্জুর করা বা না করা ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার, আইনের বিষয় না। এরপর ট্রাইব্যুনাল সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ করার কথা জানিয়ে দেয়। র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতনের এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৭ জন আসামি রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১০ সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা হলেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম। পলাতক আসামিরা হলেন–সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক র্যাবের ডিজি এম খুরশিদ হোসেন ও ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, র্যাবের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খায়রুল ইসলাম।



