তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে বলেছেন, আপনি দারুণ করছেন, কিন্তু আপনাকে ধূমপান ছাড়তে হবে। জবাবে জর্জিয়া মেলোনি রসিকতার ছলে জানান, যদি তাকে ধূমপান ছাড়তে হয়, তবে তিনি ‘কাউকে মেরে ফেলবেন’! ৪৮ বছর বয়সি এই জনপ্রিয় নেত্রী সোমবার মিশরের শারম–আল–শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় এমন মন্তব্য করেন। এ সময় এরদোগানের কথা শুনে পাশে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ হাসিতে ফেটে পড়েন। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘অসম্ভব’।
তখন মেলোনি জবাব দেন, ‘জানি, জানি। আমি কাউকে মেরে ফেলতে চাই না!’ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে মেলোনি জানিয়েছেন, তিনি ১৩ বছর পর আবার ধূমপান শুরু করেছেন। তার ভাষায়, ধূমপান তাকে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করেছে’, বিশেষ করে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদের সঙ্গে। সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মেলোনির প্রশংসা করেন। ট্রাম্প মেলোনির সম্পর্কে মজা করে বলেন, আমি সাধারণত এটা বলি না, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নারীকে সুন্দর বললে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিচ্ছি—তিনি এক সুন্দরী তরুণী! ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি অসাধারণ, ইতালিতে তাকে অনেক সম্মান করা হয়। তিনি অত্যন্ত সফল এক রাজনীতিক। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ক্ষমতায় আসা মেলোনি ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত হয়েছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন — বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে। জর্জিয়া মেলোনি ২০০৬ সালের ইতালির সাধারণ নির্বাচনে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এএন) এর সদস্য হিসেবে চেম্বার অফ ডেপুটিজে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি এর সর্বকনিষ্ঠ ভাইস–প্রেসিডেন্ট হন। একই বছর তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালে ৩১ বছর বয়সে তিনি চতুর্থ বার্লুসকোনি সরকারের যুব নীতি মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি সংযুক্ত ইতালির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৯ সালে তার দল ফোরজা ইতালিয়া (এফআই) এর সঙ্গে দ্য পিপল অফ ফ্রিডম (পিডিএল)-এ একীভূত হয় এবং তিনি ইয়ং ইতালি নামে পরিচিত ইউনাইটেড পার্টির যুব বিভাগের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মেলোনি, লা রুসা এবং ক্রোসেটো একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন ব্রাদার্স অফ ইতালি (এফডিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালের ইতালির সাধারণ নির্বাচনে তিনি বার্লুসকোনির মধ্য–ডানপন্থি জোটের অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ২ শতাংশ ভোট এবং ৯টি আসন পেয়েছিলেন। তিনি লম্বার্ডির চেম্বার অফ ডেপুটিজে পুনরায় নির্বাচিত হন এবং পরে তাকে হাউসে দলের নেতা নিযুক্ত করা হয়। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে তিনি এফডিআই–এর সভাপতি হন এবং এপ্রিল মাসে তিনি ইতালিতে ২০১৪ সালের ইউরোপীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় এফডিআই–এর নেতা হিসেবে মনোনীত হন। ২০২২ সালের ইতালির সাধারণ নির্বাচনে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।