বর্ষা মানেই শুধু বৃষ্টি নয়, এ সময়টা অনেকের জন্য এক রকমের উৎসব। আর শখের মাছ শিকারিদের কাছে তো এটি আনন্দের মৌসুম। কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউবা নিছক শখে ছুটে যান জলাশয়ের ধারে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিল–ঝিল, নদী–নালা আর খালের পাড়ে এখন জমে উঠেছে বড়শি ধরার উৎসব। আষাঢ়–শ্রাবণের শুরুতেই চারদিক যখন জলময় হয়ে ওঠে, তখন প্রাণ ফিরে পায় কালীগঞ্জের বিল আর নদীগুলো। সঙ্গে জেগে ওঠে শখের মাছ শিকারিরাও। কেউ পেশায় ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষক, কেউ চাকরিজীবী তবে সবার পরিচয় একটাই: বড়শির টানে ছুটে আসা এই জলভরা মাঠে। জেলেরা যেখানে সারা বছর পেশাগতভাবে মাছ শিকার করেন, সেখানে এই শৌখিন শিকারিরা মৌসুমি অভিযানে নামেন। কেউ নদীর ধারে বড়শি ফেলে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কেউবা ডিঙি নৌকা ভাড়া করে চলে যান জলাশয়ের গভীরে। মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা, বলছিলেন বেলাই বিলের এক নিয়মিত শিকারি।
দিনভর বসে থেকেও যদি একটা বড় মাছ পাই, তাতেই সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যায়। টাকা–পয়সা ওঠে কি না, সেটা ভাবি না। শুধু শখ নয়—এই আনন্দের পেছনে অনেকেরই থাকে ভালো প্রস্তুতি। কেউ কেউ টোপ বানাতে খরচ করেন শত–হাজার টাকা পর্যন্ত। কারও কাছে এটি প্রতিযোগিতা, কারও কাছে ধ্যানের মতো এক অভ্যাস। কালীগঞ্জ উপজেলার বেলাই বিল, আফাইন্নার বিল, অন্যান্য জলাশয় ও শীতলক্ষা নদীতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে এই “বড়শি মৌসুম”। সকাল থেকেই দেখা যায়—ডিঙি নৌকা, বাঁশের চেয়ার, ছাতা আর টিফিনবক্স নিয়ে হাজির শিকারিরা। বিকেল গড়ালে জলাশয়ের পাড়ে জড়ো হন দর্শকরাও।
কেউ কৌতূহল নিয়ে দেখেন, কেউ পরামর্শ দেন, কেউবা মাছ ধরার মুহূর্ত ধরে রাখেন ক্যামেরায়। কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, শখের মাছ শিকার আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। এতে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায়। আমরা চাই, সবাই নিয়ম মেনে শিকার করুক ছোট মাছ ছেড়ে দিক, জলাশয়ের ভারসাম্য বজায় থাকুক। মাছ ধরা এখন শুধু জীবিকার বিষয় নয় এটা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম। ছুটির দিনে অনেকেই পরিবার নিয়ে আসেন, কেউ ধরা মাছ দিয়েই রান্না করেন, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে ছোটখাটো প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন। বৃষ্টি থামলে, সূর্যের আলো ঝলমল করলে আর জলের ওপর বাতাস বইলে তখন শুরু হয় বড়শির খেলা। হঠাৎ কোনো বড় মাছ টোপে ধরা পড়লে পাড়জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস। কেউ চিৎকার করেন, কেউ উল্লাসে ফেটে পড়েনআনন্দে ভরে ওঠে চারপাশ। বর্ষা শেষে জল কমে এলেও, শিকারিদের মন থেকে বড়শির টান যায় না। তারা বলেন, মাছ না ধরলে দিনটা অসম্পূর্ণ লাগে। কালীগঞ্জের জলাশয়গুলো তাই শুধু জীবিকার উৎস নয়—এগুলো এখন হয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রকৃতির সংযোগের এক জীবন্ত প্রতীক।