শেরপুর সদর উপজেলার গনই মোমিনাকান্দা গ্রামের শাহীনা বেগম (৬০)। লেখাপড়া জানেন না। বিভিন্ন গ্রামীণ সমিতি করে বারবার প্রতারিত হয়েছেন। লোকজনের কাছে শুনে শেষে নিরাপদ স্থান হিসেবে শেরপুর পোস্ট অফিসে তিন বছর মেয়াদি একটি সঞ্চয়ী আমানত হিসাব খোলেন। অনেক কষ্টে তিল তিল করে জমান বেশ কিছু টাকা। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, সেই টাকা তোলার পর সেখানে ৫৩ হাজার টাকার জাল নোট পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। জানা গেছে, সঞ্চয়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হলে টাকা তুলতে গত ৭ অক্টোবর নিরক্ষর শাহীনা বেগম আসেন পোস্ট অফিসে। পোস্টাল অফিসার হিসাব করে তাঁর হাতে তুলে দেন দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা। টাকা তোলার আগেই ওই নারী পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়াকে বলেন, ‘আমি লেহাপড়া জানি না। আমার সাথে কোনো নুক (লোক) নাই, বাবা আন্নে (আপনি) আমার টাকা গুইনা দিবাইন। টাকা থুইয়া দিমু, যাতে মাইনসে না জানে। জানলে বিপদ হইতে পারে।’
এরপর ওই কর্মকর্তা টাকা দিলে তা নিয়ে বাড়িতে রেখে দেন শাহীনা বেগম। এ বৃদ্ধার মেয়ে সুমি আক্তার ঢাকায় থাকেন। খবর দিলে তিনি বাড়িতে আসেন। গত রোববার সকালে মেয়েকে নিয়ে ওই টাকা জমা দিতে শাহীনা বেগম যান শহরের শহীদ বুলবুল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি উত্তরা ব্যাংকে। ক্যাশিয়ার টাকা গোনার সময় ৫৩টি এক হাজার টাকার জাল নোট পান। পরে তিনি বিষয়টি শাখার ম্যানেজারকে জানান। উত্তরা ব্যাংকের ওই শাখার ক্যাশিয়ার মাহবুব রহমান বলেন, টাকা গোনার সময় ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল পেয়ে ঊর্ধ্বতন অফিসারকে অবহিত করেছি। এদিকে ঘটনা জানার পর বৃদ্ধা শাহিনা বেগম কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে ব্যাংকে কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়াকে ঘটনা জানালে তিনি দায় নিতে অস্বীকার করেন। ভুক্তভোগী নারীর মেয়ে সুমি আক্তার বলেন, অনেক কষ্টে আম্মা টাকাগুলো জমিয়েছেন। সহজসরল মানুষটি পোস্টাল অফিসারের কাছে লেখাপড়া না জানার কথা বললে তিনি এর সুযোগ নিয়ে আম্মাকে জাল টাকা দিয়ে দিয়েছেন। আম্মা টাকা নিয়ে সেভাবেই বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন। পোস্ট অফিসের সিসি ক্যামেরা দেখে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়া বলেন, ওই নারী ৭ অক্টোবর টাকা উত্তোলন করেন। পাঁচ দিন পর এসে তিনি দাবি করছেন টাকা জাল। এটা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা দেখে নিই এবং দেওয়ার সময় তাদের টাকা দেখে নিতে বলি। তিনি টাকা বুঝে নিয়েছেন।
এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না। শেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নূর কুতুব আলী বলেন, জাল টাকার ঘটনাটি শুনেছি। অভিযুক্তের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। আসলে কী ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত হচ্ছে। যদি পোস্ট অফিসের কেউ জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।