“ইসরাইলের সেই বাকী লোকেরা অন্যায় করবে না তারা মিথ্যা কথা বলবে না এবং তাদের মুখে চলনা থাকবে না তারা খেয়ে নিরাপদে ঘুমাবে কেউ তাদের ভয় দেখাবে না” (সফনিয় ৩ : ১৩), “হে জেরুজালেমের লোকেরা সেই সময়ে আমি তোমাদের নিয়ে এসে জমায়েত করব আমি যখন তোমাদের অবস্থা ফিরাব তখন দুনিয়ার সমস্ত জাতির মধ্যে আমি তোমাদের সম্মানও গৌরবের পাত্র করব আর তোমরা তা দেখতে পাবে আমি মাবুদ এই কথা বলছি” (সফনিয় ৩ : ২০)।
পড়ন্ত বেলা পায়চারি করছিলাম, দেখতে পেলাম একটি করাতকল চালু রয়েছে। অনেকগুলো কাঠের গুঁড়ি চেরাইর জন্য জমা করে রাখা, বাগান থেকে কাঠ কেটে আনা হয়, তারপর একপাসে উক্ত গাছের বাকল ফেলে দেয়া হয়। যে গুঁডিগুলোর বাকল পরিষ্কার করা হয়েছে ওগুলো করাতকলের টেবিলে রাখা হয়েছে, একটার পর একটা চেরাই করা হচ্ছে, যা দখে আমার বেশ কৌতুহল জেগেছে। কাঠের আসবাবপত্র এমনি করে আমরা পেয়ে থাকি। প্রথম বাগান থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়, তারপর ওগুলো করাতকলে এনে প্রয়োজনমত অর্থাৎ মাপমত চেরাই করা হয় এবং পরিশেষে কাঠমিস্ত্রির হাতে তা তুলে দেয়, যে কোনো ফার্নিচার তৈরীর জন্য। আমার চোখে পড়লো, কাঠের গুঁড়ির পুরো অংশ দিয়ে কোনো ফার্নিচার তৈরী করা সম্ভব হয় না। গুঁড়ির বাহিরের অংশ অসার বা পরিপক্ক না হওয়ার কারণে তা চুলায় জ¦ালাবার জন্য আলাদা করে রাখা হয়।
দেখা যায় কাঠের কেন্দ্রীয় অংশটা হলো পরিপক্ক যা উইপোকা নষ্ট করতে পারে না। আর তেমন অংশ দিয়ে যে ফার্নিচার প্রস্তুত করা হয় তা বহুদিন টিকে। শতবর্ষী একটি গাছ দিয়ে ফার্নিচার তৈরী করা হলে এবং উষড় অংশটি বাদ দিয়ে দিলে যে সুফল লাভ হয় তা একই বৃক্ষের সবকটা অংশ দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। আজকের যে চারা বৃক্ষটি অতীব পেলব অবস্থায় আছে, যতœ পরিচর্যা দিলে তা একসময় বিশাল বপু হয়ে দাড়ায় এবং শতবৎসর পরে একই চারা গাছটি হয়ে দাড়ায় পরিপক্ক একটি বৃক্ষ যা যেকোনো কাজে লাগানো সম্ভব।
মানব জাতির ইতিহাস, তাদের বিকাশ, সুসভ্য সমাজ গড়ে তোলার বিষয়ে যে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে প্রবৃদ্দি ও সমৃদ্ধিশালী হবার পিছনে তা অবশ্যই তাদের পেতে হবে। আসলে সকল মানুষ স্বজন–প্রিয়জন, তা মানুষের গঠনের দিক দিয়ে বলুন বা নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদার কথাই বলুন সকল মানুষের রয়েছে অভিন্ন ব্যবস্থা। তবে অনেকেই জানেনা, সকল মানুষ যে একই পরিবার থেকে হয়েছে জাত; মানুষের আদি পিতা হলেন আদম আর আদি মাতা হলেন হাওয়া। আদম–হাওয়া খোদার কাছ থেকে প্রচুর আর্শিবাদ লাভ করেছে, প্রজ্ঞা, ধার্মিকতা ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে প্রজাবন্ত ও বহুসংখ্যক হবার জন্য, যে পদ্ধতিটি আজ পর্যন্ত চালু রয়েছে প্রত্যকটি পরিবারের মধ্যে, সকল জীব–জানোয়ারের প্রজননের মাধ্যমে বাংশ বৃদ্দি করে থাকে।
মানুষের নির্মাতা মাবুদ মাওলা হলেন প্রথম শিক্ষক তাকে সুশিক্ষিত করে তোলার জন্য। এই জন্য শিক্ষাগুরুকে পিতার সম্মান দেওয়া হয়। পিতা মাতা সন্তান উৎপাদন করার পর তাকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাগুরুর হাতে তুলে দেয়া হয়। তাছাড়া মানুষ জীবনে চলার পথে ও বাস্তবতার নিরীখে জীবনধর্মী জ্ঞান অর্জন করে থাকে। কথায় বলে শিক্ষাকাল হলো দোলনা থেকে কফিনবক্সের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত।
মানব নির্মাতা মাবুদ স্বীয় কালামের মাধ্যমে মানুষকে পথ চলার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। মাবুদ নিজের বিষয়ে আমরা দেখতে, প্রথমে কালাম ছিলেন, কালাম খোদার সাথে ছিলেন এবং উক্ত কালাম নিজেই খোদা ছিলেন। তাহলে বুঝা যায় খোদা হলেন কালাম যা আমাদের পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়া সৃষ্টিলগ্নের ইতিহাস হলো “সৃষ্টির শুরুতেই আল্লাহ আসমান ও জমীন সৃষ্টি করলেন। দুনিয়ার উপরটা তখনও কোন বিশেষ আকার পায় নি, আর তার মধ্যে জীবন্ত কিছুই ছিল না; তার উপরে ছিল অন্ধকারে ঢাকা গভীর পানি। আল্লাহর রূহ সেই পানির উপরে চলাফেরা করছিলেন।” (পয়দায়েশ ১ : ১–২)।
ইউহোন্না লিখিত সুসমাচারের পাঁচ অধ্যায়ের চব্বিশ পদে বড়ই প্রেরণাদায়ী প্রতিজ্ঞা রয়েছে, যেমন “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, আমার কথা যে শোনে এবং আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর কথায় ঈমান আনে, তার অনন্ত জীবন আছে। তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে”।
পাকরূহ, খোদাবন্ধ হযরত ঈসা মসীহ এবং বেহেশতি পিতা তারা সকলেই হলেন রূহানী সত্ত্বা, যাদের আরাধনা করতে হবে রূহে ও সত্যে। দৈহিক অঙ্গ সঞ্চালন করে তাদের পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া পার্থীব বস্তুজগতের কোনো কিছু দিয়ে তাদের তৃপ্ত করাও সম্ভব নয়। কেবল মানুষের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কৃষিজাত পন্ন তথা পশু, পাখী, মাছ অর্থাৎ জলজ প্রাণী খেয়ে থাকে। তাই মানুষের মধ্য থেকে কেউ যদি দেবতার অভিনয় করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং সাধারণ জনতাকে ধোকা দিয়ে ফেরে, তবে তার কিন্তু বেঁচে থাকার সামগ্রী অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। বস্তুগত নৈবেদ্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে দেবের বেশে নৃপতিদের জন্য। কেননা, আসলে উক্ত নৃপতি নিজেও একজন মানুষ, তাই তাকেও বেঁচে থাকার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের আবশ্যকতা রয়েছে।
খোদা হলেন রূহানী সত্ত্বা, আর খোদার কালাম ও রূহ রূহানী বটে, কেউ কোনো কালে রূহ দেখতে পায় না, মসীহ নিজেই হলেন রূহ যিনি মানুষের সুরতে মানুষের মধ্যে বসবাস করেছেন, আর ঐশি মানুষ মসীহের মাধ্যমে আমরা রূহানী খোদাকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। অভিশপ্ত ইবলিস প্রথম জোড়া মানুষ আদম–হাওয়াকে ধোকা দিয়েছে, হয়েছে কামিয়াব, তারা হারিয়ে ফেললো ঐশি অধিকার, মার্যাদা, ক্ষমতা, বাধ্য হলো নরাধমের অর্থাৎ মানবেতর জীবন–যাপন করতে, যা আজ পর্যন্ত আমরা রয়ে গেছি, বাধ্য হচ্ছি জঘন্য জীবন–যাপন করতে। মানুষ মানুষের ঘাতক। মানুষের ক্ষেত্রে ইবলিস সম্পূর্ণ স্বার্থক হলো।
অবশ্য ইবলিস ঐশি মানব খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহকেও ধোকা দিয়েছিল খোদার অবাধ্য হবার জন্য। মসীহ কালামে তীর ছুড়ে ইবলিসকে নাকাম করে দিলেন। মসীহের কাছে ইবলিস সম্পূর্ণ হেরে গেল।
আজকে যারাই বিশ^াসহেতু মসীহের মধ্যে জীবন–যাপন করে ফিরছেন তাদের কাছে ইবলিস সুবিধে করতে পারে না। তাই ইবলিসকে না বলতে শিখতে হবে। মসীহের নামে ইবলিসকে ধমক দিন, দেখবেন পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। সাহস করে তিমির অমানিশার মধ্যে ক্ষুদে একটি মোম জ¦ালিয়ে ধরুন, অকস্মাৎ কালের স্তুপীকৃত আঁধার বিলীন হয়ে যাবে। সত্যের কাছে মিথ্যা হার মেনেছে। মানুষের কাছেও প্রতারক ইবলিস হার মানতে বাধ্য, তবে ব্যক্তি যখন একা একা ইবলিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়, তখন তার পরাজয় হতে বাধ্য। আপনাকে মসীহের শক্তি, প্রজ্ঞা ও ধার্মিকতায় পরিপুষ্ট হতে হবে। তিনি আপনার মধ্যে সদাসর্বদা বাস করতে চান। তিনি হলেন একক সহায় ভক্ত অনুরাগী ব্যক্তিদের জন্য।
পাকরূহ নিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেন প্রেম ও সত্যে আপ্লুত থাকার জন্য। মসীহ গোটা বিশ^ আত্মবৎ প্রেম করেছেন, তিনি হলেন মানুষের জন্য একক নিদর্শন থাকে মানুষের জন্য মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া চলে। বিশে^ আর একজন মানুষ খুঁজে পাবেন না যিনি নিজের প্রাণ পর্যন্ত কোরবানি দিয়েছেন মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধ দেবার জন্য। তাছাড়া তার মত পূতপবিত্র আত্মত্যাগী ঐশি ক্ষমতার অধিকারী আর দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই তিনি দাবি করতে পেরেছেন, তিনিই পথ, সত্য ও জীবন। তিনিই বেহেশতি দরজা, তিনিই ¯œাতশুভ্র ব্যক্তিকে পিতার হাতে ফিরিয়ে দেবার জন্য অধিকারপ্রাপ্ত, কেননা, তিনি হলেন খোদার জীবন্তু রূহের জীবন্তু মানবরূপ, বাতেনী খোদার হুবহু বহিপ্রকাশ।
খোদা যেমন সর্বত্র বিরাজমান একইভাবে তাঁর রূহ সদাসর্বদা খুঁজে ফিরছেন আর্তপীড়িত দুঃস্থ অসহায় নিরন্ন অন্ধ গুনাহের চাপে পিষ্ট ব্যক্তিদের যেন তাদের সার্বিক নিষ্পেষণ নিপীড়ন থেকে অবমুক্ত করতে পারেন। যাকিছু হারিয়ে গেছে তা তালাশ করার জন্যই ধরাপৃষ্ঠে তার আগমন।
ব্যক্তিকে পাকরূহ যখন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে তখন ঐ ব্যক্তি মসীহের জয়গানে থাকে মুখরিত। মসীহ যা কিছু সমাজে করে দেখিয়েছেন এবং যে জন্য তার পক্ষে আত্মকোরবানি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পাকরূহে নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিও খোদার শক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে তেমন কাজে নিয়ত থাকে নিবেদিত। মানুষের কল্যাণ হলো খোদার কাজ। আর খোদার পক্ষেই মসীহ ধরাপৃষ্ঠে করেছেন আগমন। পাকরূহ ব্যক্তিকে উদ্ভুদ্দ করে চলেন মানুষের কল্যাণ সাধনকল্পে।