যমুনা নদীতে পানি বেড়ে ঠিক তেমনটাই যেন ঘটেছে। পানি বেড়ে কিছু অঞ্চলে নদী ভাঙন দেখা দিলেও সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ের জেলেপাড়ায় পড়েছে মাছ ধরার ধুম। এসব মাছ বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিনই ভালো আয়–রুজি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। প্রতিদিনই তাদের জালে ধরা পড়ছে বাতাসী, চিংড়ি, বাসপাতারী, রিটা, পাপতা, গুজি, বাচা, বাগাইর, আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ। যমুনায় পানি বাড়ার খবরে এসব মাছের চাহিদা এখন তুঙ্গে। সিরাজগঞ্জের স্থানীয় বাজারগুলোতে জমে উঠেছে বেচাকেনা। এসব বাজারে অনেকেই দূর দুরান্ত থেকে আসছেন মাছ কিনতে। সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় স্থায়ী মৎস্যজীবী আছেন ২৬ হাজার ৯৭৩ জন এবং মৌসুমী জেলে রয়েছেন ৪ থেকে ৫ হাজার।
জেলে পরিবারগুলোর আয়ের প্রধান উৎস যমুনায় মাছ ধরা ও তা বাজারে বিক্রি করা। কিন্তু জেলার নদী ও চলনবিলে পানি না থাকায় অধিকাংশ জেলেই গত কয়েকমাস ধরে বেকার হয়ে পড়েছিল। অবশেষে যমুনায় পানি বেড়ে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। সেই সঙ্গে নদী ও চলনবিলে পানি বেড়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যমুনাপাড়ের জেলেদের বেড়েছে ব্যস্ততা। রাতদিন মাছ ধরছেন তারা। জেলেদের জালে ধরা পড়া এসব মাছ বিক্রি হয় সিরাজগঞ্জের মতি সাহেবের ঘাট, বাইটারা, কাজিপুরের মেঘাইঘাট, বেলকুচি উপজেলার সোহাগপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে যমুনার মাছ। সিরাজগঞ্জ শহরে (বড় বাজারে) কাজিপুর থেকে আসা মাছ বিক্রেতা ও একই এলাকার জেলে আয়নাল হক জানান, আমরা কাজিপুরে যমুনা নদীতে রাতভর মাছ ধরে ভোরে সিরাজগঞ্জ বাজারে এসে বিক্রি করি । নতুন পানিতে ভালই মাছ ধরা পরছে । প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। সিরাজগঞ্জ শহর মতি সাহেবের ঘাটে মাছ কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, এই এলাকা নদীতীরবর্তী হওয়ায় এখানে যমুনার টাটকা বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়।
এই মাছের স্বাদও অতুলনীয়, তাই এখানে আসি যমুনার মাছ কিনতে । মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, এতদিন আমরা বেকার ছিলাম অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চালাতে হয়েছে । এখন নদীতে বানের (বন্যার) পানি আসায় মাছ ধরে বিক্রি করে টাকা আয় করছি । প্রতিদিন রাতে নদীতে ধিয়াল (মাছ ধরার যন্ত্র) পেতে মই জাল দিয়ে মাছ ধরে সকালে বাজারে বিক্রি করি এতে ১২ থেকে ১৫শ টাকার মাছ বিক্রি হয়, অনেক সময় আরও বেশিও হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনূর রহমান জানান, প্রতি বছরের মত এ বছরও জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে। সেই সাথে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে বিক্রি শুরু করছে। এতে তাদের পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা ফিরছে । তিনি আরও জানান জেলায় ২৫টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। সেখানে সারাবছর মা মাছ সংরক্ষণ করা হয়। এই মা মাছগুলো বর্ষায় ডিম ছাড়ে; যা প্লাবন ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব মাছ জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাইরেও কেনাবেচা হচ্ছে।