আমাদের অধিকারে যে দায়িত্ব রয়েছে তা অবশ্যই বর্তমানকে নিয়ে, কেননা অতীতকে না পারব ফিরিয়ে আনতে, আর ভবিষ্যত, সে তো এক অজানা অধ্যায়, প্রত্যাশার কাল গণনা মাত্র, তবে মজার বিষয় হলো, এক প্রস্থ বর্তমান যার সীমা পরিসীমা বলতে কিছুই খুঁজে পাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। দেখতে না দেখতে হয়ে যায় তা অতীত! তেমন ক্ষেত্রে গোটা বিশ^ হয়ে আছে সম্পূর্ণ অসহায় শিকার।
সময়ের ক্ষেত্রে যেমন বলা চলে, যা কিছু কালের অতলে ডুবে গেছে তা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা কোনো মানুষের হাতে নেই, তাই পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা করা হবে পন্ডশ্রম মাত্র। সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবন থেকে যাকিছু বিদায় নিয়েছে তা ফিরাবার বৃথা চেষ্টা না করে বর্তমানে হাতের মধ্যেই করণীয় যে দায়িত্বটুকু রয়েছে তা যথাযথ পালন করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ! দায়িত্ব পালন আর উদ্বেগ উৎকন্ঠায় উদভ্রান্ত হবার কোনো কারণ থাকতে পারে কি?
কথায় বলে, “ভুল হয়েছে” তা বাপু যদি তেমন উপলব্ধি মনে জেগেই থাকে তবে দ্বিতীয়বার যেন অমন ভুল আর না ঘটুক, সে বিষয়ে সজাগ সচেতন থাকতে হবে অবশ্যই। চলার পথে লোভ ও স্বার্থপরতার কষাঘাতে তাড়িত হয়ে অঘটন ঘটালে অনুশোচনা জাগে হৃদয়ে, তখন ব্যক্তি ফিরে আসে সঠিক পথে, তবে তো চুকে গেল বালা-মসিবত। তেমন ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে জানতে হবে নিজের পরিচয়, আর নির্মাতা, সে কোন সুমহান পরিকল্পনা নিয়ে, তাকে স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে, নির্মাণ করেছেন, এবং মালিকের দেয়া নিরুপিত পথে কর্মব্যস্ত আছে কিনা সে বিষয়ে ব্যক্তিকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।
ওলন ছাড়া ইমারত নির্মাণ করা হবে ধ্বংসস্তুপ জড়ো করা, ঠিক তদ্রæপ নির্মাতার পরিকল্পনা ছাড়া ব্যক্তি জীবন পরিচালনা করা হবে নিজেকে ধ্বংস করা; তা মানবজাতি প্রথম দিন থেকেই ধ্বংসস্তুপে গড্ডালিকা প্রবাহে হাবুডুবু খেয়ে চলছে যার দৃষ্টান্ত দেয়া চলে বর্তমানকার বিশ^চরাচর। কোনো এক নবী তাই বলেছেন, গোটা শরীর বিষাক্ত ও ক্ষতযুক্ত, সূচ ফুটানোর জাগয়াটুকু খুঁজে পাওয়া ভার (ইশাইয়া ১ : ৬)।
এবার আসুন, আমাদের নিজেদের নিয়ে একটু পর্যালোচনা করে দেখি। কোন অধিকারে আমরা দাবি করি, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে? অবশ্যই আমাদের পরিচয় তথাস্তু! এ ঘোষণা আমাদের নিজেদের দ্বারা দেওয়া হয় নি; খোদ নির্মাতা তা দিয়েছেন এবং সৃষ্টি লগ্নে আমাদরে প্রতি অবলোকন করে তিনি অতীব মুগ্ধ হলেন। তখনই তিনি সান্তনা ও প্রত্যয়দৃপ্ত হয়ে বলে উঠলেন “আশরাফুল মাখলুকাত” (পয়দায়েশ ১ : ৩১পদ)।
সম্মানীত পাঠক, মনে কোনো কষ্ট নিবেন না, আপনি কি কখনো রোগের কারণে চিকিৎসকের মোকাবেলা করেছেন? আপনার শরীরে গুপ্ত বা ব্যক্ত যে কোনো রোগের চিকিৎসাকল্পে তিনি হয়তো ঔষধপথ্য নির্ণয় করে দিয়েছেন, যা হলো রোগমুক্তির জন্য অপরিহার্য্য। তিনি আপনাকে যে ব্যবস্থাপত্র দিলেন তা যদি আপনি শতবার পাঠ করে মুখস্ত করেও ফেলেন তবে তাতে আপনার রোগ এতটুকু কমবে না, উক্ত নির্দেশপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত ঔষধ আপনাকে বাস্তবে সেবন করতে হবে, তবেই না হবেন রোগমুক্ত।
পাপ একটি জটিল রোগ, যা বংশ-বংশানুক্রমে আমরা ভুগে চলছি। ঐশি গ্রন্থ হলো পাপ মুক্তির জন্য অপরিহার্য্য ব্যবস্থাপত্র, যা জীবনে প্রয়োগ করেই আমরা হতে পারব নিরোগ। কিন্তু উক্ত ব্যবস্থাপত্র শতবার পাঠ করে মুখস্ত করায় কোনো বাস্তব ফল ফলতে পারে কি?
জীবনে কায়েম বা বাস্তবায়ন করার জন্য মুখস্তের চাইতে ধাতস্থ করাই হবে বুদ্ধিমত্তার কাজ। আর তেমন দায়িত্ব পালন করতে হবে; বর্তমানে খোদা আপানার কাছ থেকে ততটুকুই প্রত্যাশা করেন।