নরঘাতী যুদ্ধ যা একসাথে লাখ লাখ লোক আহুত নিহত ও পঙ্গু করে ছাড়ে, তেমন যুদ্ধ কোনো কালেই মানব কল্যাণের সোপান হতে পারে না। বর্তমানে গাজায় ফিলিস্তিনীদের উপর উপর্যোপুরি আঘাতের পর আঘাত হানা হচ্ছে, তা বোধ হয় কারো কাছেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
পূতপবিত্র সুমহান মাবুদের হাতে গড়া সৃষ্টির স্রেষ্ঠ জীব মানুষের মধ্যে কখন কোন মুহুর্তে কোন কারণে সর্বপ্রথম যুদ্ধের সূচনা হয়েছে, রয়েছে কি তা আপনার জানা? প্রথম মানুষটির পদস্খলনের সাথে সাথে সকল মানুষের মধ্যে শুরু হয়ে গেল খোদাদ্রোহীতা। এটি একটি সর্বজন সমর্থিত বিষয়। মানুষ নিজের চাইতে অন্যকে অধিক প্রেম করতে কখনোই শেখেনি, এবং তার মধ্যে এমন মেধা বা সুকুমার গুন কখনো জন্মায় নি। মানুষ হলো আত্মকেন্দ্রিক সার্থান্ধ প্রাণী। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কথা বলুন আর ইতিহাস বিরচিত হবার সময়ের কথা বলুন, মানুষ একে অন্যকে ভক্ষণ করে তবে জীবন যাপন করতো। বর্তমানে তেমন ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটতে দেখা যায় না সত্য, তবে শোষণ নির্যাতন নিপীড়ন অবগুন্ঠিত অবস্থায় সমাজে সমানে চলে আসছে, যা হফল করে বলা চলে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অযুহাতে সংখ্যাগরিষ্ট সম্প্রদায় তাড়না, লাঞ্চনা, লুটতরাজ, খুন–খারাবী করে আসছে দেশে দেশে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ তারা সকলেই মানুষ, একই আদমের ঔরষজাত যা নিঃসন্দেহে বলা চলে। আমরা সকলেই অবাধ্য খোদাদ্রোহী আদমের ফটোকপি, কিন্তু আমাদের মহান স্রষ্টার মৌলিক প্লান পরিকল্পনা ছিল, মানুষ হবে খোদার ফটোকপি, যাদের দর্শনের মাধ্যমে অদৃশ্য রূহানী খোদার দর্শন লাভ হবে পরিপূর্ণ। পাইকারীহারে মানুষ হেরে গেছে, পদস্খলিত হয়ে গেছে খোদা পথ, সত্য ও জীবন থেকে। ব্যক্তি মারা গেলে তার আর অনুতাপ করার ক্ষমতা থাকে না, তবে মূমূর্ষু ব্যক্তি মাগফেরাত চাইতে পারে। চোখ বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত যদি ব্যক্তি ক্ষমা চায় তবে মাবুদ তাৎক্ষণিক তাকে ক্ষমা করে দেন, এবং তাকে স্নাতশুভ্র করার ব্যবস্থা করে থাকেন। কালামপাকে এমন ওয়াদা আমরা দেখতে পাই বহুস্থানে।
তুমি মাবুদ আমাকে নিয়ত প্রেরণা দিয়ে চলছ, যাতে করে আমি তোমার পথে সদা স্থির থাকতে পারি। আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ দিয়েছো শতভাগ নিষ্পাপ রূহানি পুত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহের মাধ্যমে, যা কেবল প্রেমের আতিসহ্যে হয়েছে সাধিত। কেউ তোমার প্রেমের গভীরতা টের পাক বা না পাক তাতে প্রেম–পারাবারে কোনো ঘাটতি পড়ার কথা নয়, তাছাড়া যাদের প্রতি তোমার অফুরান প্রেম বইয়ে চলছো তারাও সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। ক্ষুদে একটি বালতি দিয়ে কি নদীর জলের ব্যাপ্তি মাপা সম্ভব? আমরা বিশ্বাসপূর্বক তাতে ডুবে যেতে পারি অনায়াসে। আর আমাদের তেমন প্রতিক্রিয়ায় তুমি হয়ে যাও মহাখুশি, মহাতৃপ্ত! আমি জানিনা, আর কতটা সময় রেখেছ এ মহীতলে তোমার পক্ষে সাখ্য বহন করার জন্য। তবে সানুনয়ে আমার একটা আবদার রয়েছে তোমার খাস দরবারে, যতটাই সময় তুমি এইভবে আমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছ, তা যেন সৎকর্মের মাধ্যমে কাটাতে পারি এবং আনন্দ ও তৃপ্তিসহ, তাতেই হব আমি ধন্য। অবশ্য তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক। যেমন বেহেশতে তেমন যেন পৃথিবীতেও হোক।
আমার শরীরে যে ব্যাধী দানা বেধে আছে, তা যতই মারাত্মক হোক না কেন, তোমার রহমত তার চেয়ে হাজার হাজার গুন অধিক ক্ষমতাধর! আমি বেঁচে আছি কেবল তোমার দয়ায়, আর উদ্দেশ্য হলো তোমার নির্জলা নিখুঁত প্রেম ও ক্ষমার বিষয়ে যেন সকলের কাছে ঘোষণা দিয়ে বাঁচতে পারি। বর্তমানে আমি হাটতে পর্যন্ত পারি না। আমার তো দায়িত্ব থাকার কথা নয়। মজার বিষয় হলো, আমাকে তুমি যে কাজে নিয়োগ দিয়েছো তা একস্থানে বসে বসে কার্যক্রম চালানো সম্ভব। তাই চাকুরী থেকে আমার কোনো অবসর নেবার প্রয়েজন পড়ে না। যতদিন কলম চলে ততদিন কাজে হাজিরাও চলে। তাইতো “আমি আনন্দে বন্দি দিনবন্ধু তব রাঙা পায়”। ঝর্ণাধারা যতটুকু জল পেল ততটুকুই প্রবাহিত করে হয় তৃপ্ত। বৃক্ষ ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে প্রকৃতি সাজায়, তাতেই বৃক্ষের স্বার্থকতা। উষড় মরু শিক্ত করা হলো জলের দায়িত্ব। ঘাতকের হাতের তরবারি দিয়ে কাস্তে তৈরী করা হবে কামারের দায়িত্ব। যেমন ইশাইয়া পুস্তকে বর্ণীত রয়েছে, “তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করে দেবেন; অনেক দেশের লোকদের মধ্যে আপোষ–মীমাংসা করবেন। তারা তাদের তলোয়ার ভেংগে লাংগলের ফাল গড়বে আর বর্শা ভেংগে গড়বে ডাল ছাঁটবার ছুরি। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে আর তলোয়ার উঠাবে না; তারা আর যুদ্ধ করতে শিখবে না” (ইশাইয়া ২ : ৪)। কে এই মহান শান্তিদাতা, যিনি মানুষের মধ্যে কলহ বিবাদ–বিভেদ চিরতরে দূর করে দেবেন? তিনিই হলেন ঐশি নূরের সন্তান প্রেম ও ক্ষমার আকর বেগুনাহ মসীহ। তাঁরই পক্ষে সম্ভব হয়েছে বিশ্ববাসীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বীয় পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে পরিশোধ করা। তিনিই মানুষকে অকৃত্রিম প্রেম করেছেন, হারানো সন্তান খুঁজে নিয়েছেন, পিতার সন্তান পিতার হাতে তুলে দিয়েছেন, গুনাহের গজব থেকে অবমুক্ত করে নতুন সৃষ্টি হিসেবে দাড় করেছেন। অভিশপ্ত ইবলিসের কব্জা থেকে অবমুক্ত করেছেন। একদা যারা ইবলিসের তাবেদার ছিল তাদের নতুনভাবে ঐশি চেতনায় পরিপক্ক করেছেন, ফলে তারাই ইবলিসের মস্তক চূর্ণ–বিচূর্ণ করে ছেড়েছে। মসীহের পরশে মানুষ সরস হয়ে উঠেছে, তারা পরষ্পর প্রেমের বাধনে এক ও অভিন্ন আলোর সন্তানে পরিণত হয়েছে। মসীহ কাউকে আঘাত করার জন্য আগত নন, বরং আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তাঁর দ্বারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেছে। “চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়” (ইউহোন্না ১০ : ১০)। “এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আসমান ও জমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না তৌরাত কিতাবের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই তৌরাতের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না। তাই মূসার শরীয়তের মধ্যে ছোট একটা হুকুমও যে কেউ অমান্য করে এবং লোককে তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতী রাজ্যের সবচেয়ে ছোট বলা হবে। কিন্তু যে কেউ শরীয়তের হুকুমগুলো পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতী রাজ্যে বড় বলা হবে। আমি তোমাদের বলছি, আলেম ও ফরীশীদের ধার্মিকতার চেয়ে তোমাদের যদি বেশী কিছু না থাকে তবে তোমরা কোনমতেই বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে না” (মথি ৫ : ১৭–২০)। “প্রথমেই কালাম ছিলেন, কালাম আল্লাহর সংগে ছিলেন এবং কালাম নিজেই আল্লাহ ছিলেন। আর প্রথমেই তিনি আল্লাহর সংগে ছিলেন। সব কিছুই সেই কালামের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর যা কিছু সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয় নি। তাঁর মধ্যে জীবন ছিল এবং সেই জীবনই ছিল মানুষের নূর। সেই নূর অন্ধকারের মধ্যে জ্বলছে কিন্তু অন্ধকার নূরকে জয় করতে পারে নি।” (ইউহোন্না ১ : ১–৫)। “পরে ঈসা আবার লোকদের বললেন, “আমিই দুনিয়ার নূর। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের নূর পাবে ” (ইউহোন্না ৮ : ১২)।
কয়েকটি প্রাসংগিক আয়াত তুলো দিলাম পাঠকদের সুবিধার্থে।