সাগর মোহনার নদীগুলো বছরের এ সময়টায় বিপজ্জনক জলসীমানায় পরিণত হয়। এ সময় সনদধারী সি–ট্রাক ছাড়া অন্য নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ভোলার জন্য বরাদ্দ সি–ট্রাক বিকল থাকায় বাধ্য হয়ে ফিটনেসবিহীন ছোট ট্রলার বা স্পিডবোটে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী।
ভোলার ইলিশা থেকে মজুচৌধুরীর হাট, দৌলতখান–আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন–মনপুরা, চরফ্যাসন–মনপুরা ও মনপুরা–নোয়াখালীসহ ১৫টি রুটকে বিপজ্জনক চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এসব এলাকায় নদী পারাপারে সি–সার্ভে ছাড়া অন্য নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশের উপস্থিতিতেই ঝুঁকিপূর্ণ যানে যাত্রী পারাপার করতে দেখা গেলেও তারা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটির এসটি সেরনিয়াবাদ নামের একটি সি–ট্রাক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি ট্রলারে তজুমদ্দিন ও মনপুরার উদ্দেশে শত শত যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। খোলা ট্রলার, ছাউনি নেই, বসার জায়গাও সীমিত। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে বসেছেন যাত্রীরা।
এ রুটে চলাচলকারী ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানান, ছয় মাস ধরে সি–ট্রাক চলছে না। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ট্রলারে করেই উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে হচ্ছে।
ঢাকার গাজীপুর থেকে মনপুরা ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা ট্রলারে গরু–ছাগলের সঙ্গে মানুষ পারাপার করা হয়। এসব দেখার বা নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই।
একই অবস্থা ইলিশা–লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে। এ রুটে সি–ট্রাক ও ফেরি থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ট্রলার ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রীতিমতো মাইকিং করে যাত্রীদের স্পিডবোটে তুলছেন তারা।
এ রুটের যাত্রী নিরব হোসেন জানান, সকালে এসেও সি–ট্রাক পাননি। ফেরিতে যেতে অনেক সময় লাগে। দ্রুত কর্মস্থলে যেতে স্পিডবোটে উঠেছেন। আরেক যাত্রী জানান, ইলিশা থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত সি–ট্রাক ভাড়া ১৮০ টাকা। অবৈধ ট্রলারে এ ভাড়া ৩০০ ও স্পিডবোটে ৫০০ টাকা। কিন্তু সকালে ঘাটে এসে সি–ট্রাক না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে অবৈধ যানে চলাচল করতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিটিএর সহকারী বন্দর ও পরিবহন কমকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, দুর্যোগ মৌসুমে নৌপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে ৩ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বে–ক্রসিং বা সি–সার্ভে সনদ ছাড়া কোনো যান যাতে বিপজ্জনক এলাকায় চলাচল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু চিঠি অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থাই নিতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, বিপজ্জনক চিহ্নিত এলাকায় অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।