ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে চালকরা। এ সময় মিরপুর ও পল্লবীর কালশীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেলে কালশীর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ চালকরা। এর আগে সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষাভ করে তারা। এ সময় ১০–১২টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটে দুর্ভোগে পড়েন অনেকে।
থেমে থেমে দিনভর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক বন্ধ করে প্রতিবাদ করে অটোরিকশাচালকরা। তাদের বিক্ষোভের কারণে রাত পর্যন্ত যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চালকরা মিরপুর ১০, ১১ ও ১২, টেকনিক্যাল, আগারগাঁও, সরকারি বাঙলা কলেজ, মাটিকাটা, বাড্ডা, তালতলা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকার বিভিন্ন সড়কে হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান করেন। দুপুরের পর পুলিশ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গেলে কালশী এলাকায় সংঘর্ষ বাধে। দফায় দফায় পুলিশ ও চালকদের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে চালকরা আশপাশের গলিতে অবস্থান করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে এক চালক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না। এগুলো চলতে যেন না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এমন ঘোষণা আসার পরেই অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ২৪১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ২৩৯টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ১১৩টি ইজিবাইক জব্দ করার পর ডাম্পিং করা হয়। চালকদের ভাষ্য, এতে রুটি–রুজির ওপরে আঘাত এসেছে। এর প্রতিবাদে গতকাল রাস্তায় নামেন অটোরিকশাচালকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অটোরিকশাচালকদের বিক্ষোভের কারণে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মচারীসহ অনেককে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। মিরপুর থেকে বারিধারাগামী জুবায়ের আহমেদ সমকালকে বলেন, উপায় না দেখে হেঁটে গন্তব্যের দিকে ছুটছেন।
বিক্ষোভকারী চালকদের দাবি, কোনো শর্ত ছাড়া অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালাতে দিতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। খিলগাঁওয়ে বিক্ষোভকারী কাশেম মিয়া বলেন, এসব রিকশার মালিক তো আমরা নই, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি এসবের মালিক। ভাড়া নিয়ে দিন চুক্তিতে চালাই। সরকার এসব বন্ধ করে দিলে আমরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাব? বন্ধ করার আগে বিকল্প পথ খুঁজতে আমাদের সময় দিতে হবে।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আসেন ঢাকা–১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। তিনি আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন। তাঁর আশ্বাসে চালকদের একটি অংশ আন্দোলন শেষ করে ফিরতে সম্মত হলেও আরেকটি অংশ লাঠি হাতে অবরোধ শুরু করে। এ সময় পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চালকদের কেউ কেউ বলেন, অটোরিকশা যদি অবৈধই হয়, তাহলে আমদানি করার অনুমোদন সরকারিভাবে কেন দেওয়া হলো? রিকশা কিস্তির মাধ্যমে ঋণ করে কিনেছেন। তবে বেশির ভাগ চালক ভাড়ায় নিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। এখন অটোরিকশা বন্ধ করে দিলে কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন। কর্মসংস্থানের অন্য ব্যবস্থা করে দিয়ে অটোরিকশা বন্ধ করলে কোনো আপত্তি নেই।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে অটোরিকশাচালকরা ১০ নম্বর চত্বরে জড়ো হয়ে বাস ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে তারা লাঠি হাতে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। চালকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশের ওপর চালকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর মিরপুর এলাকা থেকে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলনের নামে গণপরিবহনে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে সরিয়ে দিলে তারা আবারও ভাঙচুর চালায়। তাদের পেছনে কেউ আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বক্সে আগুন ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ঢাকা শহরে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটা চলবে। সরকার রাজধানীতে এত বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করার পরেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না এসব অবৈধ বাহনের জন্য। যাদের জীবন–জীবিকা এই বাহনের ওপর নির্ভরশীল, তারা সেটা পরিবর্তন করে নিলেই হয়। গতকাল পুলিশের সঙ্গে কয়েক স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
বিআরটিএ জানায়, ব্যাটারি অথবা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির থ্রি–হুইলারের কারণে ঢাকা নগরীতে সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফিটনেসের অনুপযোগী, রংচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করে ঢাকায় ফিটনেসবিহীন অটোরিকশা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।