পাকিস্তানের মধ্য–পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবে দেশটির ২৪ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস করে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল–এন) উভয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই এখানকার নেতৃত্বে ছিলেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিন্তু গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পাল্টে গেছে সব হিসাবনিকাশ। সেনাবাহিনী ও সরকারের চরম দমন–পীড়নের মধ্যেই প্রদেশটিতে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের অভাবনীয় উত্থান ঘটেছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েই ভেঙে দিয়েছেন সেনা ও নওয়াজের ঘাঁটি। ইমরানের এমন অকল্পনীয় জয়ে স্বয়ং নওয়াজের দলের নেতারাই হতবাক। অন্যদিকে পিটিআই বলছে, তরুণ ভোটাররা সেনাবাহিনী আর পরিবারতন্ত্রকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন। দলের সিনিয়র সদস্য হাম্মাদ আজহার বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রজন্মগত একটি পরিবর্তন হয়েছে। ব্যালটে তরুণ ভোটাররা দীর্ঘদিনের পরিবারতান্ত্রিক দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
পিএমএল–এন ও এর জোটসঙ্গীরা আবার ক্ষমতায় এলেও সরকার গঠনের আগেই তাদের বেশ দুর্বল দেখাচ্ছে। পিটিআইর প্রতি জনসমর্থন ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
এমন বাস্তবতায় ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পাকিস্তানের সবচেয়ে ফলপ্রসূ দাবি করে নওয়াজের দলের সিনেটর মুশাহিদ হুসেন বলেছেন, ‘এই নির্বাচন জাতীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। মানুষ এবার স্বেচ্ছায় পিটিআইকে ভোট দেওয়ার জন্য দলে দলে বেরিয়ে আসে। সাধারণত প্রার্থীদের দেওয়া পরিবহনে তাদের বাসে করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়। কিন্তু এবার তারা ভোটের দিন বেরিয়ে ছিল নিজে থেকেই।’
হুসেন বলেন, এই নির্বাচনের পর পাঞ্জাব এখন পিটিআইর শক্তিশালী ঘাঁটি। প্রায় দুই বছর ধরে দমন–পীড়নে বিপর্যস্ত কোনো দলের জন্য এটি অসাধারণ কৃতিত্ব। তাঁর দাবি, পিটিআইর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে পিএমএল–এনকে অবশ্যই দলের ঐতিহ্যগত পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে সংস্কার শুরু করতে হবে।
অনাস্থা প্রস্তাবে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পিএমএল–এন এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জোট দেশটিতে ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী করা হয় নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফকে।
এ নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের পথে হাঁটছেন নওয়াজ। নতুন সরকার গঠন করতে সক্ষম হলেও তাদের নানামুখী সংকট নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে। কারণ, দেশটিতে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। নওয়াজ দাবি করেছেন, সরকার গঠন করে তিনি অর্থনীতি চাঙ্গা করাকে অগ্রাধিকার দেবেন। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, পাকিস্তানের কাছে পরিস্থিতি উত্তরণের তেমন পথ নেই।
নির্বাচনের ফল প্রকাশে বিলম্ব এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসছে পিটিআই। জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনের মধ্যে ৯২টিতে জয়ী হন ইমরানের পিটিআই সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলটির দাবি, ফল প্রকাশে কারচুপি না করলে তারা আরও ৮০টি আসন পেত। বিষয়টি আদালতেও নিয়ে গেছে পিটিআই।
পিএমএল–এনের সিনিয়র এক সদস্য স্বীকার করেছেন, জাতীয় পরিষদে বৃহত্তম একক দল হবে পিটিআই। এটা স্পষ্ট, জনগণ সব চাপ সত্ত্বেও পিটিআইকে ভোট দিয়েছে।