জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে থাকায় এবার নতুন বছরের প্রথম দিন বই উৎসব নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়। তবে বই উৎসব অনুষ্ঠিত না হলেও বিগত বছরগুলোর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন আনুষ্ঠানিক বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারেন। এরপর ১৫ দিন ধরে চলবে বই বিতরণ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচনের কারণে এ বছর বই উৎসব পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তবে সেই শঙ্কা এখন আর নেই। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসব উদ্বোধনের পর বছরের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ সরকারের সফল কর্মসূচির অন্যতম একটি হলো ১ জানুয়ারি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসব করা। ২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দিয়ে বই উৎসব পালন করা হচ্ছে। ২০১৪–১৫ সালে টানা অবরোধের মধ্যেও এই উৎসব বাদ যায়নি। এবারও উৎসব করতে চান সংশ্লিষ্টরা। গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে বই উৎসব পিছিয়ে যেতে পারে। ঠিক পহেলা জানুয়ারি নাকি ১০–১১ জানুয়ারি বই উৎসব হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল সেটা আপাতত দেখছে না সরকার। তাই সরকারের সফল এই কার্যক্রমকে ভালো করে প্রচার করতে চায় তারা। এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জানান, ১ জানুয়ারিই বই উৎসব করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনাও পাঠানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে প্রতি বছরের মতো ১ জানুয়ারি বই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। তারপর বই বিতরণ চলবে ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক–প্রাথমিক ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই।
ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই।
ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্যবই। এসএসসি ভোকেশনাল ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্যবই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হবে ৭২৮টি বই।
বই ছাপা সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বেশিরভাগ বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই চলে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই পৌঁছে যাবে। কোনো প্রকাশক কিছু বই ৭ তারিখের মধ্যে দিলেও সমস্যা হবে না।’