বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও সংকটজনক। তবে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটারও আগের চেয়ে ভালো আসছে। যদিও আরও ভালো চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো উন্নতি এখনও হয়নি। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে তাঁর চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে নতুন একটি বিশেষজ্ঞ দল আজ বুধবার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান। এ হাসপাতালেরই করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দলের মনোনীত ব্যক্তির ব্রিফিং ছাড়া অন্য কারও বক্তব্যে ভরসা করবেন না। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক চিকিৎসা কার্যক্রম নজরদারির পাশাপাশি দেশি–বিদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য বিএনপির সব প্রস্তুতি রয়েছে। তবে বর্তমান অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্য থেকে তাঁকে (খালেদা জিয়া) দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন। তারা দেখার পর তিনি যদি বাইরে যাওয়ার মতো অবস্থায় আসেন এবং যদি মেডিকেল বোর্ড মনে করে, তখন তাঁকে যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার। চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ অনলাইনে এবং সরাসরি যুক্ত আছেন। গতকাল রাতে চীনের একটি নতুন বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় পৌঁছেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে গতকাল মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন অনেক মানুষ। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা সামলাতে ছিল তৎপর। দুপুরে তোলা সমকাল
বিএনপির
মিডিয়া সেলের
সদস্য শায়রুল
কবির খান জানান,
খালেদা জিয়ার
পরিবারের সদস্য
ও চিকিৎসকদের
সঙ্গে কথা
বলেছেন তিন
বাহিনীর প্রধানরা।
তারা আশু
আরোগ্য কামনায়
দোয়া করেছেন।
এদিকে, দলের চেয়ারপারসনের
অসুস্থতায় উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে
বিএনপির সর্বোচ্চ
নীতিনির্ধারণী ফোরাম
জাতীয় স্থায়ী
কমিটি। তাঁর
সুস্থতার জন্য
যেখানে যা
প্রয়োজন, তা সম্পন্ন
করার তাগিদ
দিয়েছেন দলটির
নেতারা।
মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকরা ডাক দিলে কিছুটা সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গতকাল রাতেও ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক করেছে মেডিকেল বোর্ড। যেখানে দেশি–বিদেশি অন্তত দেড় ডজন চিকিৎসক যুক্ত হন। লন্ডন ক্লিনিকের বিখ্যাত চিকিৎসক প্যাট্রিকও ছিলেন। বৈঠকের পর বোর্ডের এক সদস্য জানান, কিছু জটিলতা কেন বারবার দেখা দিচ্ছে, তার কারণ খোঁজা হচ্ছে। নতুন করে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হবে।
বিশেষ
নিরাপত্তায় এসএসএফ
সরকার খালেদা
জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ ঘোষণা করার
পর গতকাল
দুপুর ২টা
২০ মিনিটে
এভারকেয়ার হাসপাতালের
ভেতরে দায়িত্ব
নেয় স্পেশাল
সিকিউরিটি ফোর্স
(এসএসএফ)।
বিশেষ নিরাপত্তা
বাহিনী আইন,
২০২১ অনুযায়ী
তাঁকে এসএসএফ
সুরক্ষা দেওয়া
হচ্ছে। এসএসএফ
দায়িত্ব নেওয়ার
পর হাসপাতালের
লবি, চত্বর ও
কেবিন এলাকার
নিরাপত্তা জোরদার
করা হয়েছে।
হাসপাতালের সামনে ভিড়
খালেদা জিয়ার
চিকিৎসা নিয়ে
উত্তেজনা বাড়ায়
হাসপাতালের সামনে
ভিড় করেন
কয়েকশ নেতাকর্মী
ও সাধারণ
মানুষ। কেউ
ছবি তুলছেন,
কেউ লাইভ
দিচ্ছেন, কেউ সেলফি
তুলে সামাজিক
মাধ্যমে আপডেট
করছেন।
হাসপাতালের প্রধান ফটকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসএসএফের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যও দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীর বাড্ডা থেকে আসা সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ফেসবুকে নানা খবর দেখে বাসায় থাকতে পারছিলাম না। তাই এসে একটু দেখে গেলাম।’ এদিকে উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। রোগী পরিবহন ও জরুরি সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য পুলিশ বারবার লোকজনকে সরে যেতে বলছে।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয় খালেদা জিয়াকে। পরে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।



