সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মিনিস্টার বাড়ি না ভেঙে সেটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বাড়িটির বেদখল হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। শনিবার দুপুরে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট–সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত মিনিস্টার বাড়ির ফটকে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ, সিলেটের ট্রাস্টি রেজাউল কিবরিয়ার সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মানববন্ধন শুরু হয়। সেভ দ্য হেরিটেজের পক্ষে সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদীর সঞ্চালনায় একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সংগঠক সৈয়দ মনির হেলাল, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশ (আইএবি) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি রাজন দাশ, সাংবাদিক আব্দুল কাদের তাপাদার, মুহিত চৌধুরী, সিলেট লেখিকা সংঘের সাধারণ সম্পাদক ইশরাক জাহান জেলী, স্থপতি কল্লোল চন্দ শান্ত, স্থপতি রেজওয়ান আহমেদ সামি, স্থপতি মারিয়াম চৌধুরী, স্থপতি রাবেয়া বসরী রিফাত, স্থপতি শাহ মো. হাছিন শাদ, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, শেওতি আলম প্রমুখ। মানববন্ধনে স্থপতিদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশ (আইএবি)সহ বিভিন্ন ব্যক্তি।
বক্তারা বলেন, সিলেট যেমন প্রকৃতিকভাবে সম্পদে সমৃদ্ধ, তেমনই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়েও সমৃদ্ধ। অতীত ইতিহাস সুরক্ষিত থাকে স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে। এ অবস্থায় মিনিস্টার বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হলে ইতিহাসের একটি প্রমাণ হারিয়ে যাবে। বক্তারা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে কেবল নির্দেশনা দিয়ে নয়, নিদর্শন হিসেবে ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষণের আহ্বান জানান এই বাড়িটির জন্য। এদিকে মানববন্ধন চলাকালে দেখা গেছে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে চলছে ভবন ভাঙার কাজ। এ বিষয়ে জানতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা বাড়ির মালিকপক্ষের প্রতিনিধি আনিসুল ইসলামকে ফটক থেকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাননি। ঐতিহ্যবাহী মিনিস্টার বাড়ির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের আসামের মন্ত্রী রাজনীতিক আবদুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সেই সূত্রেই বাড়িটি মিনিস্টার বাড়ি নামে পরিচিতি পায়। এই বাড়িতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তৎকালীন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যাদের মধ্যে আছেন– মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ। আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থে এই বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।


