কুড়িগ্রাম ও তার আশপাশের অঞ্চলে কার্তিক মাসে আর অভাব নেই। বদলে গেছে মানুষের জীবনচিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষ নানাভাবে কৃষিতে ঝুঁকছে। জেলায় রয়েছে ১৬টি নদ–নদী। এর অববাহিকায় ৪০৫টি চর–দ্বীপচরে ধানসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হচ্ছে। চলে যাচ্ছে দেশের সর্বত্র। এসব চরের বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম আলুর চাষ হচ্ছে। কে আগে আলু লাগাতে ও বাজারে আনতে পারে তার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করেছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, আগাম আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু উঠতে শুরু করে। গতবার আলু চাষিরা প্রচুর লোকসান গুনেছে। লোকসান কাটানোর জন্য এবার ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছে। তবে গতবারের চেয়ে আলু অনেক কম আবাদ হচ্ছে জেলায়। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার চর–দ্বীপচরসহ প্রায় ১২ ইউনিয়নে আগাম আলুর চাষ করছে গৃহস্থ ও কৃষকরা। তবে গত বছরের চেয়ে পরিমাণে অনেক কম। গত বছরের আলু জেলার বিভিন্ন কোল্ড স্টোরে এখনো ৫০ হাজার টনের বেশি মজুত আছে, যা বিক্রি শেষ হতে আরও ৬ থেকে ৭ মাস লেগে যাবে। প্রতি কৃষক আর গৃহস্থ আলুতে লোকসান গুনছে। তবে কিছু কৃষক আর গৃহস্থ মানুষের কাছে ধারদেনা ও ব্যাংকের লোন নিয়ে লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য আগাম আলু চাষ করছে।
এমনিতেই বাজারে ইউরিয়া, পটাস ডি এ পি ও টিএসপি সারের দাম অনেক বেশি। আলু চাষিরা চড়া দামে সার কিনে আগাম আলুর চাষ করছে। প্রকৃতির যদি কোনো বিপর্যয় না হয় তাহলে এবারও আগাম আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম আলুর ভোক্তাদেরও চাহিদা থাকে অনেক বেশি। আগাম হওয়াার কারণে এই আলুর দাম চড়া থাকে। কৃষকরা তাদের খরচ মিটিয়ে কিছুটা লাভবান হয় বলেই ঝুকি নিয়ে গৃহস্থ ও কৃষকরা আগাম আলু চাষ করছে। মাস্টারেরহাট গাছবাড়ি গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ আর ম–লেরহাট গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া জানান, আমরা গত বছর ১০ একর আগাম আলু আবাদ করেছি। কিছুটা লাভবান হয়েছি। পরে মৌসুমেও আরও ১০ একর আলু আবাদ করেছি। এতে মূলধন হারিয়ে গেছে। গত বছরের আগাম আলুর আশায় এবারও আলু চাষ করেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করছি। এবার যদি দাম না পাই তাহলে আমরা মাঠে মারা যাব। একই এলাকার শ্রমিক বাদল, আরিফুল ও হাসান মিয়া জানান, গত বছর যারা ২০ একর আলু আবাদ করেছিল এবার সেই কৃষক ৫ একর আগাম আলুর চাষ করছে।
কারণ জমি ভাড়া, লেবার খরচ, সার ও তেলের অভাব। কৃষকরা আবাদ করতে পারছে না। আমরা যারা শ্রমিক আছি কমমূল্য পাওয়ার কারণে কাজ করতে পারছি না। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক আব্দুল্লা–আল–মামুন জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ১শ’ হেক্টর, যা গত বছরের অর্জনের চেয়ে ৯শ’ হেক্টর কম। ইতোমধ্যে আমাদের কৃষকরা আগাম আলুর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রাজারহাট ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় আলু রোপণ শুরু করেছে।



