জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে বাঁচতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, মামুন আদালতে অপরাধ স্বীকার করে নিজের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়েছেন—নিজেকে সেফ করার জন্য। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ বুধবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া চৌধুরী মামুনের প্রসঙ্গ আসতেই এমন মন্তব্য করেন তিনি। টানা তিন দিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে বেকসুর খালাস প্রার্থনা করেন তিনি। বিভিন্ন সাক্ষীর দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে এদিন যুক্তিখণ্ডন করেন আমির হোসেন।
তিনি বলেন, উনি (মামুন) তো নিজে বাঁচার জন্য অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচতে চাইছেন। তার এ কথার জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, তো নিজে বাঁচার জন্য অন্য আসামিরা আসে না কেন? উনি তো গোপন করেননি, নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। আমির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদেশগুলো কীভাবে সরবরাহ হয়েছে, সার্কুলেট হয়েছে সে বিষয়ে বলছি। প্রধানমন্ত্রীর আদেশগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামুনের কাছে বলেছেন—সাক্ষ্যে এমন কোনো বক্তব্য কি এসেছে? তখন প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, ‘আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। জবাবে আমির হোসেন বলেন, আইজিপি মামুন নিজে বাঁচার জন্য অনেক কিছুই বলেছেন। সেটাকে আমি ডিনাই করি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, সেটা আমরা যাচাই–বাছাই করে দেখব যে উনার এটা সত্য কিনা, উনার যে শর্ত ছিল সেটা পূর্ণ হয়েছে কিনা। আমির হোসেন বলেন, এই মামলার প্রায় সব সাক্ষী বলেছেন, হাজার হাজার মানুষ হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, ওবায়দুল কাদের ও সাবেক আইজিপি মামুন দায়ী।
কিন্তু কোনো সাক্ষী বলেননি শেখ হাসিনা নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছেন। এমন কোনো জবানবন্দিও নেই। এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষীরা আমজনতা। তারা সব ঘটনা ঠিকমতো হয়তো জানেন না। তাছাড়া অনেক সাক্ষী ইনজুরির কথা বললেন এবং ট্রাইব্যুনালে দেখিয়েছেনও। সুনির্দিষ্টভাবে আপনি বলছেন না কী কারণে আপনার মক্কেল নির্দেশদাতা বা অভিযুক্ত নন—এটা তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন। এবং যারা গুলি চালিয়েছে, তাদেরকে তিনি (শেখ হাসিনা) নিবৃত করার চেষ্টা করেছেন কিনা বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা, সেটা প্রমাণ করুন। জবাবে আমির হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত ভিডিও–অডিওগুলো এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সাক্ষী হিসেবে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, তার বক্তব্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। কারণ তিনি সে সময় দেশে ছিলেন না।
লেখালেখির কারণে তিনি জেল খেটেছেন, সাজাও হয়েছে। তার সঙ্গে সরকারের একটা বিরোধ ছিল। তার এই সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া জবানবন্দি প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, তার বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। সরকারকে অপসারণ করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের সঙ্গে নাহিদ ইসলামরা জড়িত না—এটা সঠিক নয়। তাদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দেশি–বিদেশি শক্তিও জড়িত ছিল। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ডিজাইন কাজ করেছে।
বৃহস্পতিবার শেষ হতে পারে যুক্তিতর্ক
জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ বৃহস্পতিবার ধার্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী (আসামি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।



