বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী জলাতঙ্ক রোগ। পোষা প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বাড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সর্বত্র। চলতি বছরের নয় মাসে বরিশাল বিভাগে ১০ হাজার ৮৫১ জন মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অতিসম্প্রতি ঝালকাঠিতে কাজী মনিরুজ্জামান মান্না নামের এক যুবকের জলাতঙ্কে মৃত্যুর পর স্থানীয়দের মাঝে চরম ভীতি বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রামক এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ৯ মাসে বরিশাল জেলায় ৩ হাজার ৮৭৭ জন, বরগুনায় ১ হাজার ৪৩৫ জন, ভোলায় ১ হাজার ৬৭১ জন, ঝালকাঠিতে ৭৬৩ জন, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ১১৭ জন এবং পিরোজপুরে ৯৯৪ জন জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আর এনিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৫১ জন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সরেজমিনে বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে দেখা গেছে, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন রোগীরা। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিনশ‘ রোগী ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে বরিশাল নগরীর কাশিপুরের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন (১৪) বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ভ্যাকসিন নিতে এসেছে। সদর উপজেলার কড়াপুর গ্রামের শিশু সিয়াম (৬) নিয়েছে প্রথম ডোজ।
নবগ্রাম রোডের শিশু মাইদা (৪) বাসার পোষা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে ভ্যাকসিনের সংকট না থাকলেও মাঝে মাঝে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, অনেকেই পোষা প্রাণী রাখেন কিন্তু তাদের ভ্যাকসিন দেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, জলাতঙ্ক প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু রয়েছে। আক্রান্ত হলে দ্রুত নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহন করতে হবে।
তাছাড়া আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোড়দার রয়েছে। পোষা প্রাণীদের বছরে অন্তত একবার টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক দাবি করে তিনি আরও বলেন, জলাতঙ্ক প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সময়মতো ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং পোষা প্রাণীর টিকাদানই এখন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।



