কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নদী ও খাল–বিল ছেয়ে আছে নিষিদ্ধ জাল ও বাঁশের ফাঁদ। নির্বিচারে মাছ শিকার চলছে। ফসলি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকও বৃষ্টির পানির সঙ্গে গিয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক জলাশয়ে। যার প্রভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। হাট–বাজারেও দেখা মিলছে না দেশি প্রজাতির অনেক মাছ। এক সময় তিতাস নদী ও আশপাশের খাল–বিলে ছিল রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, শিং, মাগুর, কই, পুঁটি, টাকি, শোল, গজারসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছের প্রাচুর্য। কিন্তু এখন কোনো কোনো প্রজাতির মাছের দেখা মেলে না বললেই চলে। কারেন্ট জাল, চায়না জাল ও আড়েরি (বাঁশের ফাঁদ) ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ ধরা হচ্ছে। ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশি মাছের ওপর। এমনকি ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না শিকারিদের কবল থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে– তিতাস, মধুকুপি নদী ও বিভিন্ন খালবিলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে বাঁশের ফাঁদ, কারেন্ট জাল ও চায়না জাল। ফসলি জমিতে ফলন বাড়াতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন কৃষক। বর্ষার সময় এসব বিষাক্ত পদার্থ বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদী–নালা, খাল ও পুকুরে মিশে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলজপ্রাণী। কারেন্ট জাল, চায়না জাল ও আড়েরি ব্যবহার করায় ধ্বংস হচ্ছে মাছের আবাসস্থল। জিনিয়াস ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি বলা সেই প্রবাদ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন বাজারে গেলে দেশি মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, চাষের মাছে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এসব মাছে কোনো স্বাদ ও গন্ধ নেই। উপজেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে যদি পানির প্রবাহ বাড়ানো যায়, তাহলে কিছুটা হলেও এলাকার মানুষ দেশি মাছের স্বাদ পাবে। মজিদপুর ইউনিয়নের কাকিয়াখালী গ্রামের মৎস্য শিকারি কার্তিক ও হারাধন জানান, এক সময় খালবিলে প্রচুর মাছ মিলত। যখন ফসলি জমিতে হালচাষ দিত, তখন হালের সঙ্গে দেশি মাছ পাওয়া যেত।
এখান আর সেই মাছ পাওয়া যায় না, প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের ভাষ্য, আগে জাল ফেললে জালে মাছ ভরে উঠত, এখন আর তেমন ওঠে না। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষণাবেক্ষণ যদি এখন করা না হয়, তাহলে এই মাছ হারিয়ে যাবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. নাজমা আক্তার বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশি মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলছে। একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব মাছ আর দেখবে না। তবে মৎস্য অধিদপ্তর দেশি প্রজাতির মাছ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে। তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিনের ভাষ্য, দেশি মাছ কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে কৃষিজমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জলাশয়ে পানি সংকট, মৎস্য অভয়াশ্রম কম থাকা, মৎস্য আবাসভূমির চ্যানেল বন্ধ হওয়া উল্লেখযোগ্য। এসব মাছ রক্ষার জন্য কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। বিশেষ করে মৎস্য আইন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।