দীর্ঘদিন ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখিয়ে আসছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার স্বপ্ন আবারও অধরা রয়ে গেল তার। ফলে বারাক ওবামাকে ছাড়িয়ে যেতে ট্রাম্পের বহু বছরের আকাঙ্ক্ষা আবারও ব্যর্থ হলো। এ বছর নরওয়েজীয় নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। আসলে বারাক ওবামাকে ছাড়িয়ে যেতেই মূলত নোবেল শান্তি পুরস্কার চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার পর তিনি আশা করেছিলেন, এবার হয়তো পুরস্কারটি তারই হাতে আসবে।
তার ছেলে এরিক ট্রাম্পসহ ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ গোষ্ঠীর অনেক সমর্থক দাবি করেছিলেন, গাজার শান্তি প্রচেষ্টার জন্য পুরো পুরস্কারটিই ট্রাম্পের নামে উৎসর্গ করা উচিত। তারপরও ট্রাম্প নিজে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন। নোবেল নিয়ে হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না। দেখুন, আমি সাতটা যুদ্ধ মিটিয়েছি, অষ্টমটার কাছাকাছি আছি। এমনকি রাশিয়া–ইউক্রেন পরিস্থিতিও আমরা শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে ফেলব। ইতিহাসে কেউ এতটা করেনি। তবুও তারা হয়তো কোনো কারণ খুঁজে আমাকে পুরস্কারটা দেবে না।’ অবশ্য নোবেল কমিটির সহসভাপতি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেছিলেন, যেসব প্রার্থী নিজেকে পুরস্কারের জন্য জোরালোভাবে প্রচার করেন, তাদের ক্ষেত্রে এ প্রচারণা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সমালোচনা করেছেন বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওবামা ‘কিছুই করেননি‘ বরং ‘আমাদের দেশ ধ্বংস করেছেন‘। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ‘আটটি যুদ্ধের অবসান‘ ঘটিয়েছেন। তবে তিনি দাবি করেন, এসব কাজ তিনি কোনো পুরস্কারের আশায় করেননি। তিনি বলেন, ‘ওবামা কিছুই না করে নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি জানতেনই না, কী কারণে এটা পেলেন। তিনি শুধু নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তারা ওবামাকে এটি দিয়েছে আমাদের দেশকে ধ্বংস করা ছাড়া একেবারে কিছুই না করার জন্য।‘ ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র আট মাস পরই বারাক ওবামা মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হন। মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস সে সময় জানায়, এই স্বীকৃতি ছিল ‘অত্যন্ত আগাম‘ এবং মন্তব্য করে যে নোবেল পুরস্কারের জন্য ‘আরও কঠোর মানদণ্ড থাকা উচিত‘। জানুয়ারিতে ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নরওয়ের পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অস্লোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নোবেল কমিটিকে শান্তি পুরস্কারের প্রার্থী মূল্যায়নে সহায়তা করে। তার এই প্রচেষ্টা মোটেও লুকানো বা ক্ষুদ্র ছিল না। ট্রাম্প বিভিন্ন ঘটনা ও অর্জনের জন্য প্রায়শই নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং অনেক সময় তার ব্যক্তিগত প্রভাব অতিরঞ্জিত করেছেন। গত মাসে, তিনি প্রায় নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন, জাতিসংঘে তার ভাষণে তিনি দাবি করেছেন, তিনি ‘সাতটি প্রবল যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন’। খবর এনডিটিভি’র।