দক্ষিণ সুদানের লোপিত পর্বতমালার পশ্চিমের প্রত্যন্ত গ্রাম লোহোবোহোবো। কৃষিনির্ভর এ গ্রামে বৃষ্টি মানেই ফসলের জীবনরক্ষা। আর বৃষ্টি আনার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় ‘রেইনমেকার’ সলোমন অতুরের ওপর। বহু বছর ধরে প্রার্থনা ও আচার–অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা করতেন তিনি। কিন্তু কয়েক বছরের ধারাবাহিক খরায় ফসল নষ্ট হয়ে খাদ্যসংকট দেখা দেয়, গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত কুসংস্কারের বলি হন অতুর। গ্রামের নেতারা অতুরের কাছে বৃষ্টি না হওয়ার ব্যাখ্যা চান। তিনি কোনো উত্তর দিতে না পারায় ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও শেষরক্ষা হয়নি তার। কয়েকজন যুবক তাকে জোর করে গ্রামে ফিরিয়ে আনে।
এরপর ২০২৪ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকে গ্রামে ফেরার পরের দিন সকালে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “অতুর কোনো প্রতিরোধ করেননি। তাকে গ্রাম থেকে বের করে পর্বতের নিচে সদ্য খনন করা একটি গর্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।” সলোমন অতুরের হত্যার খবর প্রথম স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং পরে তার পরিবারের সদস্য, রাজ্যের রাজধানী তোরিতের সরকারি কর্মকর্তা ও গ্রামের বাসিন্দাদের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরা তা নিশ্চিত করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু সংকটে বিপর্যস্ত দক্ষিণ সুদানের কৃষিনির্ভর গ্রামগুলোতে খরা এবং খাদ্যসংকট ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
হতাশাগ্রস্ত মানুষরা সমাধান না পেয়ে ‘রেইনমেকার’দের দায়ী করছে এবং সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে। স্থানীয় নেতা ও সংবাদমাধ্যমের তথ্যে জানা গেছে, গত চার দশকে লোপিত পর্বতমালার এলাকায় অন্তত পাঁচজন ‘রেইনমেকার’কে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশপাশের গ্রামগুলোতে আরও অনেকে একই ধরনের পরিণতির শিকার হয়েছেন—কেউ জীবিত পোড়ানো হয়েছেন, কেউ পিটিয়ে মারা গেছেন বা নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি আল–জাজিরা। বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট দক্ষিণ সুদানে শুধু খাদ্যনিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলেনি, বরং কুসংস্কার ও সহিংসতাকে আরও উসকে দিচ্ছে।