ফাঁকা পড়ে আছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। অধিকাংশ ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সচ্ছল ব্যক্তিরা। তাদের কেউ ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ তালা দিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এমন অবস্থা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের নিমাইমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০–২১ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে নিমাইমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ভূমিহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। সে কারণে প্রতিটি ঘর বরাদ্দের সময় দুই শতক খাস জমি ঘরের মালিকের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। প্রাধান্য পায় ডাংধরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ভূমিহীন পরিবার। ঘর বরাদ্দের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ঘরগুলো বরাদ্দের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেন তারা। স্থানীয়দের দাবি, ঘর বিতরণে উপকারভোগী নির্বাচনে অনিয়ম করা হয়েছে। প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আত্মীয় সম্পর্কে ও বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন করে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে আশ্রয়ণের ঘরে থাকছেন না তারা। অনেকেই ঘর বিক্রি করেছেন। সরেজমিন দেখা যায়, ৩০টি ঘরের মধ্যে ছয়টিতে মানুষ বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে দুজন ঘরের মালিক নন। তারা ঘরমালিকের আত্মীয়। ঘর মালিক না থাকায় শুধু দখলদারিত্ব বজায় রাখতে তাদের তুলে দিয়েছেন। বাকি ২৪টি ঘর তালাবদ্ধ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উত্তর সারির ছয়টি ঘরে বসবাস করছেন ডাংধরা ইউনিয়নের সোনাকুড়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজলী বেগম, বিন্দুর চরের রাশেদা বেগম ও হাসিনা বেগম, জমিলা বেগম, কাউনিয়ার চরের সামছুন্নাহার ও নিমাইমারী গ্রামের কমলা বেগম। তাদের মধ্যে জমিলা বেগম ঘরের মালিক নন।
তিনি তাঁর নাতনি অমেলার ঘরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, তাঁর বসতভিটা নেই। এর পরও তাঁকে ঘর দেওয়া হয়নি। আশ্রয়ণের বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, তাঁর বাড়ি নিমাইমারী। প্রকল্পের শুরু থেকেই বসবাস করছেন তিনি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি ঘর রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ছয়টি ঘরে মানুষ বসবাস করছে। বাকি ২৪টি ঘরে দীর্ঘদিন ধরে কোনো মানুষ থাকছে না। কাজলী বেগম বলেন, তাঁর বাড়ি সোনাকুড়া পূর্বপাড়া গ্রামে। শুরু থেকেই আশ্রয়ণে থাকছেন তিনি। তিনিও আবু বক্করের মতো একই কথা বলেন। জমিলা বেগম জানান, তাঁর বাস্তুভিটা নেই। তিনি ঘর পাননি। কিছুদিন ধরে নাতনি অমেলার ঘরে বাস করছেন। নাতনি এলে ঘর ছেড়ে দিতে হবে। কোথায় যাবেন তা জানেন না। ডাংধরা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, ঘরগুলো তাঁর সময়ে বরাদ্দ হয়নি।
আশ্রয়ণের ঘরে বসবাস না করার কথা আগে শোনেননি। ঘর পেয়েও থাকছেন না এমন হলে বুঝতে হবে তাদের ঘরের প্রয়োজন নেই। তাদের হয়তো অন্যত্র থাকার জায়গা রয়েছে। এখন ঘরগুলো কী করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কর্তৃপক্ষ। ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আল মামুন জানান, ঘরগুলো তাঁর সময়ে বিতরণ করা হয়নি। ২৪টি ঘরে লোক না থাকার বিষয়টি পরিদর্শন করে জেনেছেন তিনি। ৩০টি ঘরের মধ্যে ছয়টিতে বসবাস করছেন লোকজন। পাঁচটি ঘরের মালিক ঢাকায় থাকেন। বাকি ঘরগুলোতে কেউ থাকেন না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেবেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, আশ্রয়ণের ঘরগুলো ভূমিহীন অতিদরিদ্র পরিবার, যাদের বসতভিটা ও ঘর নেই তাদের পাওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।