খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির চুল্লির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রভাবশালীদের মদদে বছরের পর বছর চলতে থাকা এই কয়লার চুল্লিগুলো এখন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিনে চাঁদখালী বাজার সংলগ্ন পাইকগাছা–কয়রা প্রধান সড়কের পাশে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে বাড়ছে কয়লার চুল্লির সংখ্যা। প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। এতে শুধু বনজ সম্পদই ধ্বংস হচ্ছে না, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া যা স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব চুল্লির ধোঁয়ায় রাস্তায় চলাচলও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অনেকেই চোখে জ্বালা, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে ভুগছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতি মাসে ৩–৪ বার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি হয়।
এতে মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। বছরের হিসেবে হিসাবটা দাঁড়ায় ১২ লক্ষ মন কাঠ যা দেশের বনজ সম্পদের উপর এক ভয়াবহ আঘাত। এই কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসরকারিভাবে সামাজিক ও সরকারি বন থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই অবৈধ কার্যক্রম চালাতে মালিকপক্ষ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক মহলকে “ম্যানেজ” করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি জানা গেছে, চুল্লির মালিকদের একটি সমিতি ও মাসিক ফান্ড রয়েছে যেখান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে ‘ম্যানেজমেন্ট’ পরিচালিত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, ওরা খুবই ক্ষমতাধর। সবদিক ম্যানেজ করে চলে, তাই কেউ ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৬৯টি চুল্লির মধ্যে মাত্র ৫টি স্ক্যাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
বাকি চুল্লি বন্ধে মুচলিকা নিয়ে সময় দেওয়া হলেও তিন বছর পার হলেও চুল্লিগুলো এখনো চালু। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াসের নামে নেওয়া মুচলেকার শর্ত আজও বাস্তবায়িত হয়নি। চাঁদখালী ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ সরদার বলেন, এই চুল্লিগুলো বায়ু দূষণের পাশাপাশি পরিবেশ ধ্বংস করছে। গাছপালা কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। কেউ অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এফএমএ রাজ্জাক বলেন, কয়লার চুল্লি বন্ধে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন সাময়িক অভিযান চালালেও এটি এখন স্থায়ী সমাধানের দাবি। তা না হলে পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম জানান, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।