তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামলেন তিনি। ছেলেরা বাবার গালে ‘বেসো’ এঁকে দিল। আর্জেন্টাইন ভাষায় চুমুকে বলে ‘বেসো’। ভরা গ্যালারির দিকে তাকালেন। দুচোখ ভিজে গেল। যিনি সূচনা বানিয়েছেন তিনি সমাপ্তি বানালেন কেন। অদ্ভুত না! ২০ বছর আগে বুয়েনস এইরেসের এই মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার নীল–সাদা স্ট্রাইপের জার্সি গায়ে প্রথম খেলতে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল ভেনেজুয়েলা। এবারও ৩০ মিলিয়ন জনঅধ্যুষিত সেই দেশ। গ্যালারিতে স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো, তিন সন্তান এবং বাবা জর্জকে বসিয়ে মেসি করলেন জোড়া গোল (৩৯ ও ৮০ মিনিটে)। তিনটিও হতে পারত। তার শেষ গোলটা যদি অফসাইডের ফাঁদে খারিজ না হয়ে যেত। অপর গোল লাউতারো মার্তিনেজের, শুয়ে দুর্দান্ত হেডে। আর্জেন্টিনার ৩–০ গোলের জয় এখানে গৌণ। মুখ্য এক রাজপুত্রের আবেগ ও অশ্রুর আখ্যান। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে শুরু এই ম্যাচ যতটা না ছিল আর্জেন্টিনা–ভেনেজুয়েলার, তার চেয়ে অনেক বেশি মেসির। শেষবার ঘরের মাঠে নেমে আবেগের সুরভি ছড়ালেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
চিকচিক করছিল তার চোখের কোণ। গ্যালারিভর্তি দর্শক কোরাস কণ্ঠে ‘লিও, লিও’ বলে চিৎকার করছিল। সাইয়ারা’র (নক্ষত্র) দুচোখ ভিজল আবেগের অশ্রুতে। ‘এভাবে এখানে শেষ করাটা…’ বাক্যটা অসম্পূর্ণ রেখে দিলেন। মেসি চোখ মুছলেন। আবেগ তখন ‘পারানা’ (আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় নদী) হয়ে উঠেছে। সময়ের নিষ্ঠুরতায় এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে থাকে। সূচনা ও সমাপ্তিকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে ৮০ হাজার দর্শকের মনুমেন্টাল হয়ে ওঠে মহানক্ষত্রের বিদায়মঞ্চ। দেশের মাটিতে যে এটাই ছিল মেসির শেষ ফুটবল–জাদু। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার আর কোনো ম্যাচ নেই। ম্যাচ শেষে ৩৮–এর জাদুকরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কতদূর আর কতদূর! দার্শনিকের মতো তার উত্তর, ‘বহু বছর পেরিয়ে গেছে। ম্যাচের পর ম্যাচ খেলেছি। আমি খুশি। এভাবে শেষ করতে পারা… এটাই তো চেয়েছিলাম। এই স্বপ্নই তো এতদিন দেখেছি।’ প্রশ্নচিহ্ন নিজেই বসিয়ে দিয়েছেন মেসি, ‘বয়সের কথা মাথায় রাখলে, যুক্তি মানলে বিশ্বকাপে হয়তো খেলা হবে না।
তবে আমি খেলতে চাই। যদি ফুটবল আর উপভোগ করতে না পারি, তাহলে নিজেই সরে যাব।’ বিষণ্নতা ও বিহবলতা খেলা করে তার দুচোখে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা আগেই বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে। তবু ভেনেজুয়েলা ম্যাচের গুরুত্ব ছিল মেসির কারণে। অশ্রু দিয়ে লেখা এই ম্যাচ শেষে বিদায়ের বার্তা দিয়ে রাখলেন মেসি। প্রাক–ম্যাচ কথোপকথনে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, আর্জেন্টিনায় এটা লিওর শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে না। কখন থামবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধুই তার। আমাদের দিক থেকে বলতে পারি, সবসময় সমর্থনের সবটুকু ওর জন্য বরাদ্দ থাকবে।’