পুণর্মিলন বা সমন্বয়সাধন যার ইংরেজি শব্দ হলো Reconciliation এর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কিতাবুল মোকাদ্দস জুড়ে। তা শব্দটি নিয়ে ধ্যান-মনন করা হলে প্রচারক, পালক, পুরোহিতগণ আপন আপন বাগযন্ত্র বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন। যেমন, কিতাবে দেখা যায়, “সেইজন আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবান গাহের উপরে তোমার দান কোরবানী দেবার সময় যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কিছু বলবার আছে, তবে তোমার দান সেই কোরবানগাহের সামনে রেখে চলে যাও। আগে তোমার ভাইয়ের সংগে আবার মিলিত হও এবং পরে এসে তোমার দান কোরবাণী দাও “সেইজন্য আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানগাহের উপরে তোমার দান কোরবানী দেবার সময় যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কিছু বলবার আছে, তবে তোমার দান সেই কোরবানগাহের সামনে রেখে চলে যাও। আগে তোমার ভাইয়ের সংগে আবার মিলিত হও এবং পরে এসে তোমার দান কোরবানী দাও” (মথি ৫ : ২৩-২৪)।
উক্ত শিক্ষার আলোকে দান কোরবাণী দিতে নিষেধ করা হয় নি; বরং প্রধান্য দেয়া হয়েছে, প্রথমে মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে তবে প্রভুর সাথে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটানোহলো প্রধান শর্ত। প্রচারক পান্ডাপুরোহিত সকলেই মানুষ, আর এ মানুষদেরকেই বেছে নেয়া হয়েছে মাবুদের পক্ষে সমাজকে শিক্ষা প্রদানের জন্য। মানুষ সহজেই ভুলের শিকার। মানুষ অপরাধ প্রবণ, পালক পুরোহিত বিশেষ দায়িত্ব পাওয়ার ব্যক্তি হলেও তারা পাপ প্রবণতার উর্দ্ধে নয়; সে কথা তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সমাজ সংসারে চলার পথে ত্রুটি বিচ্যুতি তাদের থাকতেই পারে। যেমন লেখা আছে, সূর্য ডুবিার পূর্বে তোমাদের রাগ ছাড়িয়া দাও, ভাইয়ের সাথে মিলিত হও, তারপর পরষ্পর মিলে মাবুদের বন্দনা করো “এইজন্য তোমরা মিথ্যা ছেড়ে দাও এবং একে অন্যের কাছে সত্যি কথা বল, কারণ আমরা সবাই একে অন্যের সংগে যুক্ত। যদি রাগ কর তবে সেই রাগের দরুন গুনাহ্ কোরো না; সূর্য ডুববার আগেই তোমাদের রাগ ছেড়ে দিয়ো, আর ইবলিসকে কোন সুযোগ দিয়ো না” (ইফিষীয় ৪ : ২৫-২৭), “পাওনার ব্যাপারে কোন গরীব এবং অভাবী মজুরের প্রতি অন্যায় করবে না- সে তোমাদের কোন ইসরাইলীয় ভাই হোক কিংবা তোমাদের দেশের ভিন্ন জাতির কোন বাসিন্দাই হোক। সূর্য ডুববার আগেই তোমরা তার মজুরি দিয়ে দেবে, কারণ সে গরীব এবং সেই মজুরির উপরেই সে ভরসা করছে। তা না করলে তোমাদের গুনাহ্ হবে, আর সে তোমাদের বিরুদ্ধে মাবুদের কাছে কাতর হয়ে বিচার চাইতে পারে” দ্বিতীয় বিবরণী ২৪ : ১৪-১৫)।
মানুষ প্রথম থেকেই গুনাহ করে আসছে; তারা সকলে পাইকারীহারে অবাধ্য এবং খোদার গৌরব বিনাশ করে দিয়েছে। তবুও মাবুদ বড়ই মেহেরবান, মানবের প্রতি প্রেমের আতিসহ্যে তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত পরিশোধ করার জন্য পূতপবিত্র ঐশি মেষ কোরবানী দিয়েছেন। আপনি কি সে খরব রাখেন? কখনও কি শুনেছেন তেমন অভিনব মেষের বিষয়ে? শুনেছেন কি উক্ত মেষের বিষয় বিশেষ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ?
মানুষ নিজের ক্রীত পাপ অপরাধ নিয়ে সদা থাকে চিন্তাকাতর। বাহ্যত আনন্দ ফুর্তীতে ব্যক্তি যতটাই মেতে থাক না কেন, ঐশি কালামের সামনে যখন দাড়ায়, তখন তার বিবেক তাকে চেতনাদৃপ্ত করে তোলে, চিন্তা কাতর হতে সে বাধ্য। অভিনয় জগতে নায়ক-নায়িকাগণ দর্শকদের হৃদয় কেড়ে নিতে পারলেও মেকআপ মুছে ফেলার পরে দর্পনে নিজেকে দেখে প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারে। যে কারণে সুচিত্রা সেন শেষ জীবনে জনসমক্ষে আর আসতেন না। এটা গেল দৈহিক পরিবর্তনের বিষয়। কিন্তু মসীহ মানুষের পরিবর্তন করে দিয়েছেন রূহানী পরিবর্তন, ধ্যান মননের পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, যেমন লেখা আছে, “যদি কেউ মসীহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আল্লাহ্ থেকেই হয়। তিনি মসীহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আল্লাহ্ মানুষের গুনাহ্ না ধরে মসীহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেইজন্যই আমরা মসীহের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আল্লাহ্ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসীহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আল্লাহ্র সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসীহের মধ্যে কোন গুনাহ্ ছিল না; কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের গুনাহ্ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনাহের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসীহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আল্লাহ্র পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়” (২করিন্থীয় ৫ : ১৭-২১)। মাবুদ ব্যক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন, পরিচালনা করার জন্য তাকে দেয়া হয় পাকরূহকে, যিনি হলেন খোদার রূহ, যিনি খোদ মসীহ, যিনি ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভূত হয়েছেন মানবশিশু রূপে, মানবের পাপের কাফফারা পরিশোধ দিয়েছেন আত্মকোরবানীর মাধ্যমে। প্রার্থনার পূর্বশর্ত পালন না করে আপনি যতই প্রার্থনা চালিয়ে যান না কেন, প্রার্থনার কাঙ্খিত ফল কতটা ফলতে পারে, একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।