চলিত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসময় মাদক বহনের ৪২ জনকে আটক করেছে। এদিকে উখিয়া ব্যাটালিয়ন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩৮ পিস ইয়াবা। এ সময় ৫৫ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। প্রতিদিন উখিয়া–টেকনাফ– কক্সবাজার–রামু সহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা সহ পাচারকারীকে আটক করেছে। তবে এসব মাদকের মুল গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উখিয়া–টেকনাফ –নাইক্ষ্যংছড়িতে অর্ধ শতাধিক সীমান্ত পয়েন্ট রয়েছে। এসব সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে শতাধিক গডফাদার। রাত গভীর হলে কোন না কোন সীমান্ত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দেশ থেকে নৌকায় মিয়ানমারের পাচার হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।এসব পণ্যের বিনিময়ে আনা হচ্ছে ইয়াবা,আইস ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র–গোলাবারুদ। এসব মালামাল –মাদক আনা নেওয়ার পেছনে জড়িত রয়েছে বেশীর ভাগ অস্ত্রধারী মাদক কারবারি। এছাড়া রোহিঙ্গা, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি।স্থানীয়রা বলেছেন এ অঞ্চলের মুল সমস্যা রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা চলে গেলে ইয়াবা পাচার কমে যাবে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা মিলে মিশে এ কাজে জড়িত। রোহিঙ্গাদের কমদামে লেবার হিসেবে ব্যবহার করেন। এদিকে উখিয়া–টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট ও উপকূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে মাদক আনার রুট পরিবর্তন করেছে পাচারকারীরা। সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবা আনা হচ্ছে।
বিশেষ করে ইয়াবার বড় চালান মিয়ানমার থেকে নৌপথে এনে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বাংলাদেশের জলসীমানার বাইরে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকে না। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে মাদকের চালান সমুদ্রপথে কক্সবাজার, টেকনাফ, বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও চট্টগ্রামের সীমান্ত দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে কারবারিরা। গত ২৬ আগস্ট নৌপথে আনার সময় কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনায় অভিযান চালিয়ে চার লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৯ জনকে আটক করে র্যাব–১৫। এ সময় পাচারকাজে ব্যবহৃত ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার র্যাব–১৫–এর সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক। টেকনাফ বিজিবি সূত্রে জানা যায় টেকনাফ সীমান্ত ও নাফ নদ দিয়ে পাচারের সময় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত (আট মাস) বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৩৬ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। এগুলোর বাজারমূল্য ১০৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২ লাখ ৪৭ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে নয় লাখ ১৩ হাজার ৩৭৫ পিস, মার্চে সাড়ে তিন লাখ, এপ্রিলে এক লাখ ১১ হাজার ৮২০ পিস, মে–তে এক লাখ ২০ হাজার, জুনে চার লাখ ৮৪ হাজার, জুলাইয়ে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৫ পিস এবং আগস্টে এক লাখ ৭৯ হাজার ১৫৩ পিস উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ৪২ জন পাচারকারীকে আটক করে ৫৯টি মামলা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলছেন টেকনাফ সীমান্ত ও নাফ নদে প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন ইয়াবা চালান ও কারবারিকে আটক করতে সক্ষম হয়। চলিত মাসের দুই তারিখ কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের মধ্যম ঘোনারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ উখিয়ার শীর্ষ কারবারি আবু তাহেরকে আটক করেছে রামু পুলিশ। উখিয়া ৬৪ বিজিবি সূত্রে জানা যায় পহেলা মার্চ থেকে চলিত মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন। ছয় মাসে এখন পর্যন্ত ৫৫ জন আসামিকে আটক করা হয়। এসকল আসামী প্রত্যক্ষভাবে মাদক চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা এর সাথে জড়িত। এ ব্যাপারে উখিয়া ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জসিম উদ্দিন, পিএসসি বলেন, ছয় মাসের স্বল্প সময়ে আমাদের সদস্যরা যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সীমিত জনবল ও নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তি ও জনগণের সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে সীমান্তকে আরও সুরক্ষিত করাই আমাদের লক্ষ্য।