ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দখলদার ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ফ্লাইট কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৩ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা মেহের। ইসরাইলের হিব্রু ভাষার গণমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের দিকে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলার পর অধিকৃত ফিলিস্তিনের বেশ কিছু এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। খবরে আরও বলা হয়, এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানী তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের আকাশসীমা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। এদিকে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী বুধবার জানিয়েছে, তারা ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে দুটি ভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে জানান, এই অভিযানে একটি প্যালেস্টাইন–২ ক্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তেলআবিবের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, এ হামলার ফলে ‘লক্ষ লক্ষ বসতি স্থাপনকারী’ আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান চলাচল স্থগিত হয়ে গেছে। ইয়েমেনি মুখপাত্র আরও জানান, এ অভিযানটি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের অন্যতম জবাব হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। পাশাপাশি ‘দখলদার ও যুদ্ধবাজ জায়নিস্ট শাসনকে কখনো নিরাপত্তা ও শান্তি ভোগ করতে দেওয়া হবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ইয়াহিয়া সারি। তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ইয়েমেনি অভিযানের মাত্রা পরবর্তী পর্যায়ে আরও তীব্র হবে। এর আগে, সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি বলেন, সানার ওপর সাম্প্রতিক ইসরাইলি আগ্রাসনের পর তাদের সশস্ত্র বাহিনী চারটি ড্রোন ব্যবহার করে ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর চারটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। তার ভাষায়, ‘আমরা ইসরাইলি শাসনের লক্ষ্যবস্তুর ওপর চারটি ড্রোন দিয়ে চারটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছি।
এর মধ্যে অধিকৃত জাফায় (তেলআবিব) শত্রুর জয়েন্ট স্টাফ ভবনকে একটি সামাদ–৪ ড্রোন দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এছাড়া হাদেরা বিদ্যুৎকেন্দ্র, আল–লাদ বিমানবন্দর (বেন গুরিয়ন) এবং অশদোদ বন্দরকে আরও তিনটি ড্রোন দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে’। সারি বলেন, ‘এই ড্রোন অভিযান আল্লাহর কৃপায় সফলভাবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে’। তিনি আরও জানান, ‘উত্তর লোহিত সাগরে এমএসসি এবাই (MSC ABY) নামের একটি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। জাহাজটি অধিকৃত ফিলিস্তিনের বন্দরগুলোতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছিল এবং ইসরাইলি শাসনের সঙ্গে এর সম্পর্ক ছিল। আমরা এই জাহাজে দুটি ড্রোন এবং একটি ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করেছি, যা আল্লাহর কৃপায় যথাযথভাবে লক্ষ্যভেদ করেছে’।
বিবৃতির শেষে সারি জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজায় আমাদের ভাইদের সহায়তার জন্য এসব অভিযান অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না তাদের ওপর হামলা বন্ধ হয় এবং গাজার অবরোধ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়’।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন ও অবরোধ চাপিয়ে দিলে ইয়েমেনিরা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে এবং একের পর এক হামলা অব্যাহত রেখেছে। পালটা হিসেবে সানাসহ ইয়েমেনে বিরুদ্ধেও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এতে এখন পর্যন্ত বহু সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।