গত ১২ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৯১১টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ৩৯ হাজার ৪৭২ মেট্রিকটন ৭১৭ কেজি চাল এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে চাল আমদানি অব্যাহত থাকায় সুফল পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা। ফলে তারা কেজিতে অন্তত ৫–৬ টাকা কমে চাল কিনতে পারছেন। এদিকে বন্দরের চাল আমদানিকারকরা জানান, চাল আমদানিতে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে তারা আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। যার কারণে বিপুল ভারত থেকে পরিমানে চাল দেশে ঢুকছে। তবে এই মুহুর্তে তারা লাভের মুখ দেখছেন না। হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন সূত্র বলছে, গেল এক মাস আগে ইরি–বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হলেও দেশের বাজারে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে থাকে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকার বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই অবস্থায় গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের নামে বরাদ্দ ইস্যু করে চাল আমদানি করার জন্য অনুমতি দেয়। এরপর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। প্রসিদ্ধ চাল আমদানিকারক ললিত কেশরা জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতিদিনই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে চাল আসা শুরু হওয়ায় পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে। এই ভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আরও দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারের কাছে চাল আমদানি অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়েছেন। আরেক আমদানিকারক জানান, বন্দরের মোকামে আমদানি করা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্নাসহ মিনিকেট জাতের চাল। সম্পা কাটারী জাতের চাল কেজিতে ৫ টাকা কমে ৬৭ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ৩ টাকা কমে ৫২ টাকায় এবং আঠাশ জাতের চাল কেজিতে ৪ টাকা কমে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চাল আমদানি করে লাভ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশে চাল আমদানি শুরু হওয়ার আগেই ভারতের ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩/৪ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। দাম না বাড়ালে দেশে চালের দাম আরও কমে আসতো। বাংলাহিলি বাজারের খুচরা বিক্রেতা স্বপন পাল জানান, বর্তমানে চালের দাম নিয়ে কিছুটা হলেও ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গত ৭/৮ দিন আগে সম্পা কাটারি ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এখন কেজিতে ৫ টাকা কমে ৬৭–৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চাল কেজিতে ৩/৪ টাকা করে কমেছে। শনিবার বাংলাহিলি খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট ও সম্পা কাটারি ৭০ টাকা, স্বর্না–৫ চাল ৫২ টাকা, আটাশ চাল ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা আনিছুর ও মোহাম্মদ আলী জানান, আগের চেয়ে দাম কেজিতে ৫–৬ টাকা করে কমেছে। আমরা দিন মজুরী করি। যত কমবে আমাদের জন্য তত ভালো। ভারত থেকে চাল আসার কারণে মনে হচ্ছে কমেছে। আগে দাম বেশি ছিল। হিসাবে আরও কমার কথা। এক মাস আগে ইরি–বোরা মৌসুম গেল। সেই চাল তো বাজারে থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মজুদ করার কারণে সরকারকে আমদানি করতে হচ্ছে। হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) নাজমুল হোসেন জানান, হিলি স্থলবন্দরের মাধ্যমে দেশে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ১২ আগস্ট থেকে গতকাল ৩০ আগস্ট বিকেল সোয় ৩টা পর্যন্ত ৯১১টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ৩৯ হাজার ৪৭২ মেট্রিকটন ৭১৭ কেজি চাল এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। এদিকে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) এম আর জামান বাঁধন জানান, আমদানিকারকরা ২ শতাংশ এআইটি ডিউটি দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন। এর আগে চালের উপর ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ ছিল। সরকার চাল আমদানিতে অনুমতি দেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পূর্বের ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ফলে আমদানিকারকরা কম শুল্কে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি করছেন। আমদানিকৃত চাল দ্রুত খালাসে আমদানিকারকদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।