তিমিরাবগুন্ঠিত রাতে চলার পথে একটি প্রদীপ হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলে কে না খুশি হয় বলুন? পাপ অপরাধের রাজ্যে ঐশি নূর জ্বালাবার জন্য মাবুদ নিজেই বাছাই ও মনোনয়ন দিয়েছেন নবী–রাসুল গণকে। যারাই মাবুদ মাওলার সাথে সখ্যতা রাখতে চায়, হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে ঐশি নূরের ফোয়ারা, তারা অবশ্যই খোদার মনোনীত ব্যক্তিদের সম্মান ও যত্ন করে চলেন। যারা মেহেরবান খোদাকে মহব্বত করেন, তারা অবশ্যই আপামর জনতাকে ভালবাসতে বাধ্য। বাগ–বাগিচা পরিষ্কার রাখার অর্থ ও তাৎপর্য হলো, উক্ত জমিতে, যেথা মনোনীত ফসল ফলানো হয়ে থাকে, তেমন ক্ষেত্রে মনোনীত ফসল বিনাশকারী লতাগুল্ম মুলোৎপাটন করে প্রয়োজনীয় ফসল উত্তমরূপে ফলতে সাহায্য করা। ঐশি নূরের বিষয়ে একই প্রক্রিয়া নেয়া যেতে পারে। যারাই ঐশি নূর জ্বালাতে আগ্রহী, তেমন ব্যক্তি গোষ্ঠিকে অবশ্যই সহযোগীতা দান করে চলতে হবে।
সমাজে যারাই ইভানজেলিকাল কাজে রয়েছে নিবেদিত, তাদের কাছ থেকে ক্ষুদে ক্ষুদে ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভুতি, সহযোগীতা ও কল্যাণমূলক প্রেশণা আসবে, তা অবশ্যই বাস্তবভিত্তিক স্বাভাবিক প্রত্যাশার বিষয় হবে। এমন প্রত্যাশা মোটেই অমূলক নয়।
দুনিয়ার নূর সকল গৃহে প্রজ্জলিত থাক ভালবেসে তা নূরের সন্তানদের হতে হবে মৌলিক দায়িত্ব। নূরের সন্তান হিসেবে বিশেষ পরিচিত ব্যক্তি হলেন আপনি; তা কোন অযুহাতে পরিচর্যার কাজ বন্ধ করে দিবেন। জানতে ইচ্ছে করে।
মানবজাতির বিকাশের দুদীর্ঘকালের ইতিহাস পর্যালোচনা করা হলে দেখা যায়, মানবকল্যাণমূলক অগণিত উদ্ভাবনি প্রচেষ্টা পারষ্পরিক বৈরিতার কারণে অংকুরেই বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। মানুষের সাথে মানুষের প্রেম সহমর্মীতা হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত; আর তা (প্রেম) অবহেলা বা তুচ্ছ করা হলে মানুষ কেবল তিমিরেই পড়ে থাকে না, বরং ইতোমধ্যে জীবনের যতটুকু অর্জণ করেছে, তাও অকার্যকর ও নিষ্ফলা হয়ে যায়। প্রেম, জলের সাথে তুল্য, সুজলা সুফলা ভূমি জলের অভাবে নিষ্ফলা ধুধু বালুময় ক্ষেত্রে পরিণত হয়, একইভাবে এক কালের বিজ্ঞান, সভ্যতা, সহমর্মীতাপূর্ণ উন্নত জাতি পারষ্পরিত রেষারেষির কারণে জীবন ও প্রাণহারা নরকের মত অবহেলিত অবস্থায় আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে দেখেছি।
মানুষ যখন স্বীয় আপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়, চেতনা ফিরে পায়, স্বকর্ম (অপকর্ম) থেকে ফিরে আসে এবং বাস্তবে জীবনধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করে; ঠিক তখনই মরাগাঙ্গে জলের প্রবাহ বইতে শুরু করে, উভয় তট জীবন ফিরে পায়, উৎপাদন করতে শুরু করে জীবনধর্মী ফল–ফলাদি। গানের একটি কলি তুলে দিলাম, “মরুভূমি জলে ভিজে বনানী বনে, প্রবাহিনী মরু হয় প্রবাহ বীনে।”
মানুষের সাথে মানুষের গড়ে ওঠা প্রেম অলীক কিছু নয়, মানব স্রষ্টা খোদ মাবুদ নিজেই হলেন প্রেম, তিনি নিজের প্রেমের অফুরাণ ভান্ডার উজার করে ঢেলে দিয়েছেন স্বীয় প্রতিনিধি, নিজ সুরতে গড়া মানুষের মধ্যে। উদ্দেশ্য হলো, দৃশ্যমান মানুষের স্বভাব আচরণ তথা মনমানসিকতার মাধ্যমে অদৃশ্য মাবুদ নির্মাতাকে প্রতিভাত করতে সক্ষম হয়।
যদিও খোদা মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তবে তাঁর মনোনীত সৃষ্ট মানুষটিকে প্রচুর দোয়া করেছেন, আজ্ঞা দিয়েছেন প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হয়ে গোটা বিশ্ব ভরে তুলতে, আবাদ করতে। সেই সুবাদে আমরা প্রত্যয়ের সাথে বলতে পারি, আমরা সকলেই আদমজাতি, প্রত্যেকেই আদিষ্ট অদৃশ্য খোদার দৃশ্যমান রূপধারণ করার জন্য। আমাদের কথায় কাজে, চাল চলনে, জীবনাচরণে মাধ্যমে সকলেই যেন আমাদের নির্মাতা খোদাকে দেখতে পারে, ফলে তারা সকলেই খোদার গৌরব মহিমা প্রকাশ করতে সমর্থ হবে।
খোদার দৃশ্যমান প্রতিরূপ হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহ “এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য আল্লাহর হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান, কারণ আসমান ও জমীনে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। আসমানে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে” (কলসীয় ১ : ১৫–১৬)। তিনিই মানুষের পাপ অপরাধের কাফফারা পরিশোধ করেছেন শতভাগ পূতপবিত্র আত্ম জীবনের কোরবানি দিয়ে। উক্ত কোরবানিতে বিশ্বাস করে আমরাও সকলে পাপের কাফফারা মুক্ত হয়েছি “আল্লাহ্ মানুষকে এত মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপর ঈমান আনে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। আল্লাহ্ মানুষকে দোষী প্রমাণ করবার জন্য তাঁর পুত্রকে দুনিয়াতে পাঠান নি, বরং মানুষ যেন পুত্রের দ্বারা নাজাত পায় সেইজন্য তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন” (ইউহোন্না ৩ : ১৬–১৭) “ পরের দিন ইয়াহিয়া ঈসাকে তাঁর নিজের দিকে আসতে দেখে বললেন, “ঐ দেখ আল্লাহর মেষ–শাবক, যিনি মানুষের সমস্ত গুনাহ্ দূর করেন” (ইউহোন্না ১ : ২৯) “মনে রেখো, ইবনে–আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মথি ২০ : ২৮)