চৌহালী ও চলনবিলের বিভিন্ন বিল-ঝিলে এখন চলছে শাপলা তোলার মৌসুম। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ছুটে যান ডিঙি নৌকা নিয়ে বিলের গভীরে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও অংশ নিচ্ছেন এই কাজে। দুপুরে ফিরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলে তাদের দিনযাপনের খরচ। বছরের অন্য সময় কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার পর জলমগ্ন বিল-ঝিলে কাজের সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তাই শাপলা ফুল হয়ে উঠেছে তাদের বিকল্প জীবিকার উৎস। জানাগেছে, ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ছোট-বড় নদী, খাল ও বিলগুলোতে প্রচুর শাপলা ফোটে। পানি যত গভীর হয়, সেখানকার শাপলার মানও তত ভালো হয়। চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, জন্মের পর থেকেই এই বিলে শাপলা ফুটতে দেখছি।

শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেই আশেপাশের অনেক পরিবার সংসার চালায়। চলনবিলের কদালিয়া গ্রামের শাপলা সংগ্রাহক ফরিদুল ও হান্নান জানান, ভাদ্র-আশ্বিনে অন্য কোনো কাজ না থাকায় শাপলা তুলে বিক্রি করি। প্রতিটি শাপলা ৮-১০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে দিনে ৬-৭ শত টাকা আয় হয়। অন্য সময় কষ্টে থাকলেও এই সময়টা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। শিশুরাও এই কাজে পিছিয়ে নেই। তারা জানায়, আমরা গরিব, তাই বাবা-ভাইদের সঙ্গে শাপলা তুলতে নৌকায় আসি। শুধু জীবিকা নয়, শাপলার পুষ্টিগুণ এবং ঔষধিগুণও রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ শহরের মেডিনোভা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরামুজ্জামান এবং আভিসিনা হাসপাতালের ডা. শহিদুল্লাহ বলেন, শাপলা সাধারণ সবজির চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর। এটি অ্যালার্জি, চর্মরোগ ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যায় উপকারী। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল জব্বার মো. আহসান শহিদ সরকার জানান, শাপলা ফুল এখনো প্রাকৃতিকভাবে জন্মে, এর বানিজ্যিক চাষ দেশে প্রচলিত নয়। তবে এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে আলুর তুলনায় সাতগুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। মানসিক রোগ নিরাময়েও এটি ব্যবহারযোগ্য।