দেখতে নয়নাভিরাম সারি সারি গাছের সবুজ বিছানা। শুতে মন চাইলেও শোয়া যায় না। সবুজ এ আড়ালেই আছে হাজারো শ্রমিকের ক্লান্তি কষ্ট। বাগানের চা গাছের কুঁড়ি যেমন নরম তেমনি এটি আহরণেও থাকে নরম হাতের ছোঁয়া। প্রতিটি চা–বাগানেই পুরুষ শ্রমিকের চাইতে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। একদিকে সংসারের কাজ অন্যদিকে চা পাতা সংগ্রহ। সংসারের কাজ শেষ করে প্রতিদিনের মতোই সকাল থেকে ছাতা ঝুপড়ি নিয়ে বের হন তারা। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে টিলায় টিলায় চষে বেড়ান। একটি সময় শরীরে ভর করে ক্লান্তি। নিস্তেজ শরীরকে চাঙা করতে নিজ হাতে তৈরি করেন ‘পাতিচখা’ বা ‘কাঁচা চা পাতির চাটনি’। আর এটিই হয়ে ওঠে তাদের দুর্বল স্নায়ুকে সবল করার মাধ্যম। যুগযুগ ধরে এটিইর আড়ালেই লুকিয়ে থাকে এসব নারী চা শ্রমিকদের ক্লান্তি–কষ্ট। চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। এ পাতা হাতের তালুতে ডলে তৈরি হয় ক্যাফেইন। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এই ‘পাতিচখা’ বা চা–পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। এটিই হয়ে ওঠে শ্রমিকদের ভাষায় চা পাতি ভর্তা বা ‘পাতিচখা’। কথা হয় উপজেলার করিমপুর চা–বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার। বিশেষজ্ঞদের মতে চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলতো। ১৮৪০ সালে যখন চীন থেকে চায়ের বীজ এনে কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনে পরীক্ষামূলকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয় এরপর ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে। শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলুসহ অন্যান্য উপাদান।