অলৌকিকভাবে নারী থেকে হঠাৎ পুরুষে বদলে গেলেন কলেজছাত্রী তামান্না। থেমে গেল তার নারী হয়ে পথচলার স্বপ্ন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বদল হয়েছে নারীর শরীর, বদলে গেছে চিরচেনা কণ্ঠ। আর এতেই বিপত্তি ঘটল তার জীবনে। পরিবার থেকে প্রতিবেশী জানাজানি হয়ে গেছে। গুটি গুটি পায়ে শৈশব ও কৈশোরের জীবন পার করে কুড়ির কোটায় পা রাখা তামান্না কখনও আঁচ করতে পারেননি নিয়তি তার শৃঙ্খলা জীবন এলোমেলো করে দেবে। বাগেরহাটের রামপালের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া তামান্নার জীবনে ঘটেছে এমন ঘটনা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তামান্নার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা–মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। ছয় বছর বয়সি ভাইসহ অভাব ও দারিদ্র্যতার কশাঘাতে মা তন্বী বেগম বছরের পর বছর ঘুরেছেন পৈতৃক ভিটা, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। সম্প্রতি ঠাঁই হয় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গাববুনিয়া গ্রামে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আর এখানেই বেড়ে ওঠে তামান্নার শৈশব। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছিলেন তামান্না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই অচমকা তার পরিবর্তন। জীবন ও যৌবন বুঝে ওঠার আগেই এলোমেলো সব কিছু। জন্ম থেকে নারী হয়ে বেড়ে ওঠা এই তরুণী এখন পুরুষ হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। নারী হতে পুরুষে বদলে যাওয়া তরুণী তামান্নাকে দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন হাজারও মানুষ। লোকলজ্জার ভয়ে পুরুষ হওয়া তামান্না এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।
তবে তার মা ও প্রতিবেশীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত তার শরীরের গঠন পরিবর্তন হচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো না থাকায় তামান্না প্রকাশ্যে আসছেন না।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গাববুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তামান্নার বয়স যখন চার বছর তখন বাবা–মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। চার বছর বয়সি তামান্না আর দেড় বছর বয়সি শিশুপুত্রকে নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয় তন্নী বেগমের। অসহায় মায়ের অনুপ্রেরণায় মেয়ে তামান্না স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পৌঁছেছেন। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে তন্নী বেগমের ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে চা–পানের দোকান তার। এ দোকান তার আয়ের একমাত্র উৎস। মেয়ে তামান্না উচ্চশিক্ষিত হবে; সেই স্বপ্ন নিয়েই মেয়ের জন্য অনেক ত্যাগ শিকার তার। সম্প্রতি মেয়ে তামান্নার এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপও সম্পন্ন হয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে খুলনায় মেসে ও কোচিংয়ে থাকা মেয়ে তামান্নার শারীরিক কুশলাদি জানার জন্য ফোন দিলে চমকে যান মা তন্নী বেগম। হঠাৎ মেয়ে তামান্নার কণ্ঠ পরিবর্তন। কী হয়েছে– জানতে চাইলে শরীর ব্যথা, জ্বর জ্বর লাগছে বলে মাকে জানান তামান্না। দুশ্চিন্তায় থাকা মা দুই দিন পর আবারও ফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন– মেয়ের পরিচিত কণ্ঠ পুরোপুরি পাল্টে যায়। প্রশ্ন করতেই, তামান্না বলেন, মা শরীর ভালো নেই। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করে না। তোমার কাছে আসতে চাই, কিছু বলতে চাই।
বাড়ি ফিরে তামান্না মাকে সব কিছু খুলে বলে, শরীরের নানা অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পরিবর্তনের ছবি নিজ ফোনে তুলে মাকে দেখালে মাও বিস্মিত হয়ে পড়েন। লোকলজ্জার ভয়ে শুরু করেন নানা লুকোচুরি। তন্নী বেগমের বিষণ্ণতায় একপর্যায়ে এক কান হতে অন্য কানে ছড়িয়ে পড়ে। নারী থেকে তামান্নার পুরুষ হওয়ার মতো অলৌকিক ঘটনা পাড়া–মহল্লার মানুষের মুখে মুখে। আশ্রয় প্রকল্পের ছোট কুঠিরে ভিড় করতে থাকেন পাড়া–প্রতিবেশীরা। এ অবস্থায় শরীর পরিবর্তিত অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন তরুণী থেকে যুবক হওয়া কলেজছাত্রী তামান্না (১৯)। এ বিষয়ে তামান্নার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার দাড়ি–গোঁফ উঠছে।
লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে আরও বলেন, প্রতিক্ষণে তার শরীরের গঠন বদলে যাচ্ছে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নারী থেকে পুরুষ হওয়া তামান্নার সুচিকিৎসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. বুলেট সেন বলেন, এটি হরমোনজনিত রোগ। মূলত হরমোনের এ পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়ে থাকে। পরবর্তীতে লিঙ্গ পরিবর্তনের মতো ঘটনাও অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।