একেই বলে কর্মফল! এক বছর আগেও যার কথায় নিম্ন আদালতের বিচারকরা উঠা–বসা করতেন; কাকে জেলে পাঠাবেন আর কাকে জামিন দেবেন তিনিই ঠিক করে দিতেন। সেই ব্যক্তি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আদালত চত্বরে ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও জনতার কিল–ঘুষির শিকার হলেন! খুনের মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে গণধোলাইয়ের মুখে পড়েন হত্যা মামলার আসামি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আদালত চত্বরে তাকে পুলিশ প্রহরায় দেখে উত্তেজিত জনতা ও ক্ষুব্ধ আইনজীবী কিল–ঘুষি মারতে থাকেন। আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও তাকে গণপ্যাদানি থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তবে হেলমেট পরা থাকায় মাথা কিছুটা নিরাপদে ছিল।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাবেক আইনমন্ত্রীকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। শুনানি শেষে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদরাসা ছাত্র হাফেজ সোলাইমান হত্যা মামলার আসামি। জানা যায়, প্রথমে সকালে কড়া নিরাপত্তায় আনিসুল হককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে নেয়া হয়। পরে এজলাস থেকে বের করার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ও আইনজীবীরা কিল–ঘুষি দিয়ে ধাওয়া করে। পুলিশ দ্রুত তাকে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এর মধ্যেই মার খেতে হয়। পরে প্রিজন ভ্যানে তুলে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় আনিসুল হককে। পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর গুলিবিদ্ধ হন ১৯ বছর বয়সী হাফেজ সোলাইমান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন নিহতের আত্মীয় শামীম কবির। মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খাঁন, দীপু মনি, আনিসুল হক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পন্ড করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন এবং জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেন। ওই সময়ে আনিসুল হকের নির্দেশ পেয়ে আসামিরা সড়কে অবস্থানরত ছাত্র–জনতার ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতির সৃষ্টি ও হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও মারধর করেন। তখন মাদ্রাসা ছাত্র সোলাইমান গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। সে কারণে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে কিলঘুষি দেয়।