সুনামগঞ্জের শাল্লায় জলমহালের মাছ লুটপাটের পর এবার হাওর থেকে প্রায় ১৫ একর জমির জমির পাকা ধান কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে থানা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কাছে ছায়ার হাওরে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে– উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ভাতিজা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসর সুলতানপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন ও তার ভাই নবীর হোসেনের প্রায় ১৫ একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছেন। তকবির হোসেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার আসলে কোন পদ নেই বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া।
জানতে চাইলে তকবির হোসেন জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। থানার মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে জমির অবস্থান হলেও পুলিশকে জানিয়ে ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। খবর পেয়ে আজ সকালে জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। জানা যায়, সুলতানপুর গ্রামের তকবিরের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাঙ্গে জড়িত। একই গ্রামের আলতাবের পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। রাজনৈতিক কারণে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি হাওরে ধান পাকা শুরু করলেও তকবির হোসেনদের জমির ধান না কাটতে স্থানীয় হারভেস্টার চালকদের নিষেধ করেন আলতাব হোসেন। পরবর্তীতে তকবিররা তাদের জমির ধান কাটবে বলে ঘোষণা দেয়। বিষয়টি জানার পর শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেন তকবিরের ছোট ভাই নবীর হোসেন। এরপর একই দিন রাতে যুবদল নেতা আলতাব ও তার ভাইদের নেতৃত্বে কয়েকটি হারভেস্টার দিয়ে প্রায় ১৫ একর জমির ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়ে যায়। এ সময় বার বার পুলিশকে জানালেও তারা কোন গুরুত্ব দেয়নি।
জমির মালিক তকবির হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের ইন্দনে তার ভাতিজা যুবদল নেতা আলতাব ও তার ভাইরা আমাদের প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে আমার ছোটভাইর মাধ্যমে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। জমি থেকে থানার দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ধান কাটার সময়ও পুলিশকে বারবার ফোনে বিষয়টি জানাই। কিন্তু পুলিশ আসেনি, প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়ে গেছে তারা।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা আলতাব হোসেনের মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার বড়ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সব মিথ্যা ও ভূয়া কথা। আমরা কারো জমির ধান কাটিনি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। পুলিশ এসেও তদন্ত করে গেছে।’ জমি তার ভাতিজাদের দাবি করে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘৮ কেদার জমি তকবিরের দাদার কাছ থেকে অনেক আগে আনোয়ারের বাবা কিনেছিল। তকবিররা গত ১০ বছর ধরে দখলে রেখেছে, এখন এক বছর ধান কাটতেই সমস্যা? আমরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি।’
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৮ কেদার জমির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। রাতে ধান কাটার অভিযোগ পাওয়ার পরপর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, ‘খবর পেয়ে ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে সাঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ৫–৭ একর জমির ধান কাটা দেখা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য থানার ওসিকে বলেছি।’
