ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ সড়ক থেকে মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। নান্দাইলের মোয়াজ্জেমপুরের পাকা সড়কে গিয়ে মিলেছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরগঞ্জ ছাড়াও পাশের নান্দাইল উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষসহ স্কুল–কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চলাচল করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি স্বাধীনতার আগে থেকেই বেহাল বলে অভিযোগ মাইজবাগ ইউনিয়নের মো. এহছানুল হকের। তাঁর ভাষ্য, শুকনো মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা যায়। কিন্তু বর্ষাকাল এলে কাদামাটিতে একাকার হয়ে থাকে। ফলে সড়কে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ আর কমে না। ঈশ্বরগঞ্জে এলজিইডির আওতাধীন উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটেগরির ৫৫০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার কাঁচা। স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামীণ সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় ঘুচছে না গ্রাম ও শহরের ব্যবধান। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ জনপদে উন্নয়ন না হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের বসবাস। গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, শহরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ অনেক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন পেশায় যেতে পারেন না। ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছেন। সড়ক ভালো না হওয়ায় অনেক গ্রামের ছেলেমেয়েরা শহরে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগও পাচ্ছেন না। উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের বল্লভপুর, ধুবলী, নারায়ণপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক বড়হিত ইউনিয়নের কাঁঠাল বাজারে চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা ধুবলী গ্রামের বাসিন্দা ও ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলছিলেন, ‘বর্ষাকালে এ পথ দিয়ে কলেজে আসা–যাওয়া করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। সড়কটি পাকা হয়ে গেলে আমরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতাম।’
এলজিইডি থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৫৪৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডির অধীন। এর মধ্যে ২৪৩ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার পাকা। বাকি ৩০২ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার কাঁচা। উপজেলার নামীয় ৬৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার পাকা আর ১০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার কাঁচা। ইউনিয়নের নামীয় ১৩০ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১১০ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার পাকা। বাকি ১৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার কাঁচা।
গ্রামীণ ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২৮ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭৭ দশমিক শূন্য ৭ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা, বাকি ৪৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার পাকা। ‘বি’ ক্যাটেগরির ১২১ দশমিক ৯৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৯৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার কাঁচা, বাকি ২৮ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার পাকা। বিভিন্ন ইউনিয়নে পাকা সড়কের অধিকাংশই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় উঠে গেছে কার্পেটিং। ইটের খোয়া উঠে জরাজীর্ণ হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট–বড় গর্ত। এতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বেশি প্রভাব পড়ছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। কৃষিনির্ভর এলাকার উৎপাদিত পণ্য বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিবহন ভাড়া গুণতে হয় তিনগুণ পর্যন্ত। একই প্রভাব পড়ে মৎস্য খাতেও। বর্ষাকালে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতে কাঁচা সড়ক পিচ্ছিল ও ছোট–বড় গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে যানবাহন দূরের কথা, হেঁটে চলাচলেও বেগ পেতে হয়। বিশেষ করে রোগী ও শিক্ষার্থীরা পড়েন বেকায়দায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে মনে করেন উপজেলা সুজন সভাপতি ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, এতে শিক্ষারও মানোন্নয়ন হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আহ্বান থাকবে, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কালভার্টসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে তারা যেন আরও অগ্রসর হন। উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অনেক কাঁচা সড়ক পাকা করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে। যেসব পাকা সড়ক সংস্কারের অভাবে বেহাল , সেগুলোও মেরামতের জন্যও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে। ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার মান বাড়লে গ্রাম–শহরের ব্যবধান ঘুচে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে রাস্তাঘাট ও কালভার্ট নির্মাণে বরাদ্দ এসেছে। এডিপির বরাদ্দ পেলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর কাজও বাস্তবায়ন করা হবে।