বাঁশের বেষ্টনীতে সমাধান খুঁজছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরে খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু ও নিখোঁজ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে বাঁশের বেষ্টনী দেওয়া হয়। কিছুদিন পর সেই বেষ্টনী নষ্ট হয়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে খাল-নালার পাড়। ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। গত চার বছরে নগরের খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জন মারা যান এবং নিখোঁজ হন অনেকে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর স্থায়ী বেষ্টনীর ঘোষণা দিলেও বাস্তবায়ন হয় না। জানা যায়, ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদ বাদামতল এলাকার ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদি। চসিক বাঁশের ঘেরাও দেয়। একই বছরের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে পানির তীব্র স্রোতে নালায় পিছলে পড়ে ডুবে যান সালেহ আহমেদ (৫০)। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানেও বাঁশের ঘেরাও দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম নালায় পড়ে নিখোঁজের পর নাছির খাল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তখনো চসিক বাঁশের ঘেরাও দিয়েছিল। একই বছরের ১১ জুন চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। পরদিন চাক্তাই খালে একটি মৃতদেহ ভেসে ওঠে। তা ছাড়া ওই বছরের ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে তিন বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায়। তখনো চসিক বাঁশের ঘেরাও দিয়েছিল। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর চসিক বাঁশের ঘেরাও দিয়ে নগরের সব উন্মুক্ত নালা-খালের পাড়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরে সে ঘোষণা আর বাস্তবায়ন হয় না। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে নগরের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিজড়া খালে পড়ে যান ছয় মাস বয়সি এক শিশু, তার মা ও দাদি। গত শনিবার সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হিজড়া খালের পাড়ে বাঁশের ঘেরাও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাঁশের ঘেরাওটা বৃষ্টিতে ভিজে ও রোধে শুকিয়ে কদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে। তখন আবারও জায়গাটি উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক বলেন, নগরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার উন্মুক্ত স্থান আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বা মৃত্যুফাঁদ। চসিকের উচিত ছিল বর্ষার আগেই এসব জায়গায় রেডমার্ক দিয়ে চিহ্নিত করা এবং রিটেইনিং ওয়াল বা অন্যভাবে স্থায়ী সমাধান করা। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল আলম বলেন, খাল-নালাগুলোতে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে ইতোমধ্যে প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।