রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে অনুমোদনহীন ‘দরজা খোলা’ অবৈধ গাড়ির দাপট। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় এসব গাড়িতে চলছে অবাধে যাত্রী পরিবহন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এসব মিনি মাইক্রোবাস দরজা খোলা অবস্থায় মহাসড়ক দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ফিটনেসবিহীন এসব দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাস বিআরটিএর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাইওয়ে পুলিশের চোখের সামনেই মহাসড়কে বড় বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জানা যায়, এ ধরণের দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসগুলোর নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্স এবং রুট পারমিটের বৈধতাও। মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচল করলেও এসব বাহন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দরজা খোলা রেখেই দ্রুতগতিতে এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে যাচ্ছে। চলন্ত অবস্থায় ব্র্যাকে চাপ দিলে যাত্রীরা ভেতরেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এতে করে খোলা দরজা দিয়ে মহাসড়কে যাত্রীদের ছিটকে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারি অবৈধ এসব মিনিমাইক্রোবাসের বেশ ক’জন মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের ঈদকে কেন্দ্রে করে যাত্রী পরিবহনের জন্যই এসব পুরাতন মিনি মাইক্রোবাস মহাসড়কে নামিয়েছেন।
সরেজমিনে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, মাসিক টোকেনের নামে চলছে এসব যানবাহন। স্বল্প দূরত্বের যাত্রী ওঠানো–নামানোর কারণে এসব যানবাহনের সর্বদাই থাকে দরজা খোলা। যে কারণে যানগুলো স্থানীয়দের কাছে দরজা খোলা গাড়ি নামেও পরিচিত। মহাসড়কের প্রতিটি স্টেশন এলাকায় অবাধে ওইসব যান এলোপাথাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানো–নামানোর কারণে মহাসড়কের দাউদকান্দির টোলপ্লাজা, গৌরীপুর, চান্দিনা, নিমসার, ময়নামতি এলাকায় যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। স্থানীয়দের মতে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে ওইসব যানবাহন। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা হাইওয়ে মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি কে.এম জামাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ দরজা খোলা মাইক্রোবাস তুলে দিয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিনিবাস চালু করতে মালিক সমিতির এক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সভায় মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে ময়নামতি পর্যন্ত ২৬ আসনের ৫০টি ও ময়নামতি থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত ২৬ আসনের ৫০টি মিনিবাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার রেজুলেশন অনুযায়ী জানানো হয়েছিল, আমাদের মিনিবাস সার্ভিস চালু হলে অবৈধ মাইক্রোবাস সরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের মিনিবাস সার্ভিস চালু করার পরও অবৈধ যানগুলো বন্ধ করা হয়নি। মহাসড়কে শত শত অবৈধ যানবাহন থাকার ফলে সড়কে একের পর এক ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মহাসড়ক থেকে ওইসব অবৈধ যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নিতে আমরা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী গ্রিনলাইন পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কেও বেপরোয়া দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসের জন্য গাড়ি চালানোই দায়! হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে, গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়। যার কারণে হরহামেশাই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কোনো আইনি ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে এসব গাড়ির সংখ্যা। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লাগামী তিশা পরিবহনের চালক কিবরিয়া বলেন, স্বল্প দূরন্তে যাত্রী পরিবনের জন্য এসব দরজা খোলা অবৈধ মাইক্রোবাসগুলো মহাসড়কে চলার কারণে বাস স্টেশনের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। যার ফলে রমজানের ঈদেও বড় ধরনের যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ার বাজারে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কামরুজ্জামান বলেন, গত ১৮ দিন হলো এখানে দায়িত্ব পালন করছি। একদমই আইন মানার প্রবণতা নেই মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসের চালকদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে করে যানজট আরো বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া গাড়িগুলো কে কার আগে যাবে–এ প্রতিযোগিতায় চলে তারাও সিগন্যাল মানছে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, মহাসড়কে দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসের বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এতে জীবন কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথারিটি (বিআরটিএ) কুমিল্লা সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আলম জানান, দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসগুলোর নাম্বার প্লেট সঠিক থাকলেও এগুলো মহাসড়কে চলাচল অনুপোযোগী। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন সবধরণের অবৈধ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধ, নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য যাত্রী চাহিদা থাকায় বেশকিছু মিনি মাইক্রোবাস দরজাখোলা অবস্থায় যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করে থাকে। যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এসব যানবাহনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এগুলোর ব্যাপারেও হাইওয়ে পুলিশ রমজানের ঈদকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রায় সময় এসব যানবাহন আটক, মামলা এবং জরিমানাও করা হচ্ছে।