বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতের কাঠবিড়ালির নাম মালয়ান। সম্প্রতি এ জাতের কাঠবিড়ালির দেখা মিলেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রেমা–কালেঙ্গায়। মালয়ান কাঠবিড়ালির বৈজ্ঞানিক নাম Ratufa bicolor (মালয়ান)। কাঠবিড়ালির দেহের দৈর্ঘ্য মাথাসহ প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার। আর লেজও ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ইংরেজিতে Black giant squirrel বা Malazan giant squirrel নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এ প্রাণী মূলত তৃণভোজী। এ জাতের কাঠবিড়ালিদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বুনো ফল, বীজ ও কচি পাতা।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের ফটোগ্রাফার সাহেদ আহমেদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিলুপ্তপ্রায় মালয়ান জাতের কাঠবিড়ালি। তিনি রেমা কালেঙ্গা বনে এ জাতের কাঠবিড়ালির ছবি তোলেন। প্রচলিত আছে, বাংলাদেশের শুধু রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেই বিরল এই প্রাণীর দেখা মেলে। তবে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্য বনেও আছে তবে তা সংখ্যায় এত কম যে, খুব সহজে দেখা যায় না। তথ্য সূত্র বলছে, এই প্রজাতির একটি পূর্ণবয়স্ক কাঠবিড়ালি সব মিলিয়ে দেড় মিটারের মতো লম্বা এবং প্রায় দুই কেজি ওজন হতে পারে। এদের মাথা, কান, লেজসহ পৃষ্ঠদেশ কালো বা মেরুন বর্ণের এবং পেটের দিকটা সাদা হয়।
বাংলাদেশে মোট ৮ প্রজাতির কাঠবিড়ালি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মালয়ান কাঠবিড়ালি। এটি দেখতে সাধারণ কাঠবিড়ালির মতো নয়। আকৃতিতে অন্যান্য কাঠবিড়ালির তুলনায় এরা বেশ বড়। বিশাল লম্বা লেজ আর বড় বড় কান দেখলে মনে হতে পারে বানর জাতীয় কিছু। আইইউসিএন এই কাঠবিড়ালিকে সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসাবে শনাক্ত করেছে। ক্রমাগতভাবে বন ধ্বংস, বনের প্রাকৃতিক প্রতিবেশ ব্যবস্থা বিনষ্ট করা, বনের পুরোনো এবং দীর্ঘদেহী বৃক্ষগুলো উজাড়, নতুন করে বসতি স্থাপন, দীর্ঘদিন ধরে বনে বাস করা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষরা বন্যপ্রাণীদের গোপনে শিকার বা হত্যা করার কারণে মালয়ান কাঠবিড়ালির অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। এই বিলুপ্তপ্রায় কাঠবিড়ালিগুলো গাছের মগডালে ডালপালা ও পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে থাকে।
এ বিষয় চুনারুঘাটের সন্তান, বৃন্দাবন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দেব বলেন, এতবড় কাঠবিড়ালি এখন বিশ্বে বিরল। অন্য বনে এদের অবস্থান থাকলেও সাধারণত দেখা যায় না। তিনি জানান, এই প্রাণীটি প্রাকৃতিক বনেই থাকে, তাই এখনই বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী না হলে মালয়ান কাঠবিড়ালি হারিয়ে যাবে আমাদের দেশ থেকে। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। এ সময়টা এই কাঠবিড়ালি বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তারে প্রাণী প্রেমিকদের ভূমিকা রাখা উচিত। এ বিষয়ে রেমা কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, রেমা বনটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন। এ বনের নানা প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে বিরল এবং সবচেয়ে বড় কাঠবিড়ালি রয়েছে। এটি আমাদের জন্য ভালো খবর। এটি অন্য কোনো বনে দেখা যায় না।