“একই জায়গা থেকে বের হয়ে আসা শ্রোতের মধ্যে কি একই সময়ে মিষ্টি আর তোতো পানি থাকে” (ইয়াকুব ৩ : ১১)।
যে মুখ দিয়ে মানুষকে অভিশাপ দেয়া হয় সেই মুখ দিয়ে খোদার প্রসংশা বেমানান নয় কি? যে হাত দিয়ে মানুষ খুন করা হয় সেই হাত দিয়ে পূতপাবিত্র খোদাকে সেবাদান। কে মেনে নিতে পারে বলুন? মানুষ কেন অতি সহজেই প্রতারিত হয়? এটা কি তাদের অজ্ঞতার কারণ নয়? মানুষ বরাবর অজ্ঞই থেকে গেল। সে প্রথমেই প্রতারক ইবলিসের মন্ত্রনায় ধোকা খেল মন্দ প্রভাব হলো, মানুষের কল্যাণমুখী শক্তি ও সহায়ক মনে করে নিল। চির কল্যাণকর প্রেমের পারাবার মানব শ্রষ্টা খোদাকে তুচ্ছজ্ঞান করে বসলো ইবলিসের কানমন্ত্রে।
ভাল কিছু অবহেলা করে অদ্যাবধি দুষ্ট বুদ্ধি অতি সহজেই মানুষ পছন্দ করে বসে। বিষয়টি যেন চালুন সুচের ছিদ্র খুঁজে ফেরে এবং ফলাও করে তা প্রকাশ করে। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রæতা হলো পাপের উপকরণ; মানুষকে বিনাশ করার জন্য এক ফোটা বিষই যথেষ্ট। সমুদ্রগামী জাহাজ ডুবিয়ে দিতে একটি মাত্র ফাটল বা ছিদ্রই পর্যাপ্ত। যেমন টাইটাানিক, অত বিশাল জাহাজ ডুবন্ত হীমশৈলের আঘাতে সৃষ্ট ফাটল দিয়ে জল প্রবেশ করায় সলীল সমাধি হলো জাহাজটির। মানুষের মধ্যে পাপ অবাধ্যতা তাকে তলিয়ে দিয়েছে আঁধারের অতলে; তাই তারা আজ বাধ্য হচ্ছে মানবেতর জীবন–যাপন করতে। মহান মাবুদের পরিকল্পনা ছিল তার প্রতিনিধি তারই সহভাগীতায় জীবন–যাপন করবে। “আমাদের মত করে আমাদের সাথে মিল রেখে, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি”। এ হলো মানব সৃষ্টির মৌলিক পরিকল্পনা। খোদার সাথে মানুষের সহভাগীতা হবে মানুষ খোদার হাবিব (বন্ধুত্ব) বা অংশীদারিত্ব লাভ করা, যেমন মানুষের মধ্য দিয়ে খোদা নিজেই নিয়ত হারানো সন্তানদের খুঁজে ফিরছেন। “যদি কেউ মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আল্লাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আল্লাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেজন্যই আমরা মসিহের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আল্লাহ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসিহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আল্লাহর সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসিহের মধ্যে কোন গুনাহ ছিল না; কিন্তু আল্লাহ আমাদের গুনাহ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনাহের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসিহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আল্লাহর পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়।” (২করিন্থীয় ৫ : ১৭–২১)।
যেহেতু খোদা হলেন এক রূহানী সত্ত¡া, আর পাকরূহ হলেন রূহ, মানুষের কাছে পৌছা এবং তাদের সুপামর্শদান অবশ্যই হতে হবে মানুষের মাধ্যমে। খোদা মানুষের গুনাহ না ধরে তার সাথে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খোদার সাধুপরামর্শ আমাদের মধ্য দিয়ে হারানো সন্তানদের কাছে তিনি ঘোষণা দিয়ে ফিরছেন। মানুষের সাথে মানুষের সহভাগীতা, যার মুলে হলো, মানুষের সাথে খোদার সহভাগীতা স্থাপন। এখানে দেখা যায় আল্লাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসীহের মাধ্যমে তাদের নিজের কাছে নিতে চাচ্ছেন। পিতা মাতার কাছে সন্তান যতই অবাধ্য হোক না কেন, পিতা মাতা সন্তানদের কখনোই ভুলতে পারেন না। তাদের মনোবাসনা, অপব্যায়ী পুত্র অনুতপ্ত হয়ে পুনরায় যেন ফিরে আসে তাদের কাছে। মাবুদ নিজের প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তারা খোদার দুষমণ ইবলিসের হাতে খোয়া যাবে তা তাঁর সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তিনি গুনাহগারদের স্নাতশুভ্র করে স্বীয় ক্রোড়ে ফিরিয়ে নেবার জন্য এক অভাবিত ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন। আপনি কি জানেন অথবা কল্পনা করতে পারেন তেমন চুড়ান্ত মূল্যের বিনিময়ে সুসম্পন্ন ব্যবস্থা? মাবুদ স্বীয় রূহানী পুত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহকে জগতে প্রেরণ করেছেন কোরবানিযোগ্য নিষ্পাপ মেষ হিসেবে, যাকে কোরবানি দেয়া হয়েছে বিশ্বের তাবৎ গুনাহগারদের পাপের কাফফারা পরিশোধ করার জন্য। পাপ হলো ঋণ; আর এই ঋণ শোধ করা হলো মসীহের প্রাণের মূল্যে। যেমন লেখা আছে, মসীহ সম্পূর্ণ নির্দোষ, তথাপি বিশ্বের পাপের ভার তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকেই কোরবানি দেয়া হলো, ফলে বিশ^বাসী হতে পারলো সম্পুর্ণ গুনাহমুক্ত। মানবের প্রতি খোদার অফুরান প্রেমের আতিসহ্যে পাকরূহ আমাদের কত অধিক প্রেম করেন তার জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই মসীহের আত্মত্যাগের মাধ্যমে।
এবার একটু আলোকপাত করা যাক ঝর্ণা নিয়ে। মিষ্টি আর তেতো উভয় প্রকার জল একই উৎস থেকে প্রবাহিত হয় না। তবে মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে মুখ দিয়ে খোদার প্রশংসা করা হয়, ঐ একই মুখ দিয়ে মানুষকে যখন অভিশাপ করা হয় তখন বিষয়টি কি সাধু শয়তানের চর্চা মনে হবে না? যে হাত দিয়ে খোদার সেবা করা হয় ঐ একই হাত দিয়ে যখন নগর, জনপথ কচুকাটা করতে দেখি তখন আমরা বিহ্বল হয়ে পড়ি। তেমন ক্ষেত্রে অবশ্যই ঐ সকল খলনায়কদের দ্যর্থক ব্যক্তি বলে চিহ্নিত হতে হবে। পাককালাম থেকে একটি অংশ তুলে দিচ্ছি পাঠককুলের সুবিধার্থে: “ভাইয়েরা, দুনিয়ার লোকেরা যদি তোমাদের ঘৃণা করে তাতে আশ্চর্য হয়ো না। আমরা ভাইদের মহব্বত করি বলেই বুঝতে পারছি, আমরা মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে এসেছি। যারা মহব্বত করে না তারা মৃত্যুর মধ্যে থাকে। ভাইকে যে ঘৃণা করে সে খুনী। কোন খুনীর মধ্যে যে অনন্ত জীবন থাকে না, তা তোমাদের অজানা নেই। মসিহ আমাদের জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন, তাই মহব্বত কি তা আমরা জানতে পেরেছি। তাহলে ভাইদের জন্য নিজের প্রাণ দেওয়া আমাদেরও উচিত। এই দুনিয়াতে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকবার মত অবস্থা যার আছে, সে তার ভাইদের অভাব দেখেও যদি চোখ বন্ধ করে রাখে তবে কেমন করে তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি মহব্বত থাকতে পারে?” (১ইউহোন্না ৩ : ১৩–১৭)।
খোদার কাছ থেকে আমরা অনন্ত প্রেমের ভাগ পেয়েছি, অবশ্য জনে জনে তা বিতরণের জন্য। আমার একটি গানের কলি হলো: “মরুভূমি জলে ভিজে বনানী বনে, প্রবাহিনী মরু হয় প্রবাহ বিনে”। এর অর্থ তাৎপর্য হলো, খোদা হলেন প্রেম, তিনি গোটা বিশ্বকে নির্জলা প্রেমে কাছে টেনে নিয়েছেন, উক্ত প্রেম দ্বার্থক বা প্রশ্নবিদ্ধ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ছেড়েছে। প্রেমের পরিবর্তে হিংসা, স্বার্থপরতা দিয়ে মানুষের মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। খোদা জগতকে এতটাই প্রেম করেছেন, যে তার একজাত পুত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহকে কোরবানির মেষ করে পাঠিয়েছেন যেন তিনি আমাদের বিকল্প কোরবানি হিসেবে পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিতে পারেন। মসীহ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করিলেন, ফলে আমরা পতীত বিশ্ববাসী মসীহের মধ্য দিয়ে নাজাত পাই এবং পুরাতনের অবসান ঘটে, তৎপরিবর্তে মসীহের মত নতুন জীবনে উন্নীত হতে পারি। অবশ্য পরিবর্তন পুরোপুরীভাবে নির্ভর করে খোদার রহমতের উপর। আমাদের বিশ্বাস হতে হবে নিটোল ও সার্বিক বিতর্কের উর্ধ্বে।