পূর্বাচলে বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মেলা প্রাঙ্গণের স্টলগুলো ‘হল এ’ এবং ‘হল বি’—এ দুই ভাগে বিভক্ত। মূল ভবনের বাইরেও স্টল আছে। তথ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, বাণিজ্য মেলায় এবার ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানের স্টলসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্তোরাঁ আছে। দেশীয় পণ্যের স্টলের পাশাপাশি বিদেশি স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার সচরাচর পাওয়া যায় না—এমন অচলিত পণ্যের খোঁজে মেলায় যাচ্ছেন। মেলা ঘুরে ক্রেতাদের আগ্রহের পণ্যগুলোর ব্যাপারে জানা গেল।
নজর কাড়ছে দেশীয় পণ্য
দেশীয় জামদানি, মণিপুরি ও রাজশাহী সিল্কের শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছে কয়েকটি স্টল। সরকারি তত্ত্বাবধানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্যাভিলিয়ন এবং বিসিকের আওতাভুক্ত এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নের বিভিন্ন স্টলে গিয়ে চোখ আটকে গেল। নানা রকম চিনামাটির গয়না, শাড়ি, কুর্তা, ঘর সাজানোর জিনিস, শতরঞ্জি, খেলনা, জুতা, খাদ্যদ্রব্য, পাটের সামগ্রী, নকশিকাঁথা, ব্যাগসহ দেশীয় জিনিস আছে। দেশীয় পণ্যের দোকানগুলোয় দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় দেখা গেল। জয়িতা ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়া সুইটস, অগ্রজ, ক্লে ইমেজ, ব্যাগ বাজার, দেশি, পিপলস ফুটওয়্যার, প্রকৃতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে। রিবানার স্টলে রূপচর্চার সামগ্রী চোখে পড়ল। নুরুল টেক্সটাইলে মিলবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তাঁতে বোনা গামছা, রুমাল, বিছানার চাদর, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন পণ্য।
বিদেশি পণ্যের সম্ভার
প্রতিবারের মতো এবারও ভারতীয় স্টলগুলোয় মিলছে কাশ্মীরি শাল, ভিন্ন ছাঁটের ফ্যাশনেবল পঞ্চ, মাফলার, ওয়ান–পিস, থ্রি–পিস প্রভৃতি। ভেলভেট ও কারচুপির কাজ করা কুশনকভার ও টেবিলরানারগুলো বেশ নজর কাড়ছে। জয়পুরী স্টলগুলোয় বিছানার চাদর, ব্যাগ ও জুতার দোকানে দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। জুতার মধ্যে নাগরা, জুত্তি, চপ্পল ও স্যান্ডেল থাকলেও ভারী কাজ করা জুতা এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। অনেকে বানজারা ব্যাগ ও মেটাল ব্যাগও কিনছিলেন। স্টিলের বাসনকোসনের জন্য আছে দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামস।
তুর্কিস্তানের দোকানটি সেজেছে চোখধাঁধানো সব আলোকবাতি দিয়ে। তুরস্কের স্টলে দৃষ্টিনন্দন আলোকবাতি ছাড়াও পাবেন ঐতিহ্যবাহী তৈজসপত্র এবং অন্দরসজ্জার পণ্য। ইস্তাম্বুল ও ইরানের স্টলগুলোয় আছে বাহারি সব কার্পেট। বিভিন্ন মাপ ও ডিজাইনের সিল্ক কার্পেট, সিনথেটিক কার্পেট, উলের কার্পেট, কাশ্মীরি কার্পেট। আর আছে নানা বুননের জায়নামাজ। প্রতিবারের মতো এবারও ইরানি স্টলে নজর কাড়ছে অ্যাক্রিলিক ফাইবারের তৈরি রঙিন ছাপের তৈজসপত্র।
ছেলেদের জন্য শীতপোশাক
বরাবরের মতো এবারও বাণিজ্য মেলায় ছেলেদের শার্ট, কোট, ব্লেজার, স্যুট ও প্রিন্স কোটের কয়েকটি স্টল দেখা গেল। বিশেষ মূল্যছাড়ের কারণে ক্রেতারা পছন্দের পোশাকটি লুফে নিচ্ছেন। শিশুদের খেলনার স্টলেরও অভাব নেই। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন স্টলে নানা কার্টুন ও মজার চরিত্রের মানবপুতুলও রাখা হয়েছে।
নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি
বিক্রেতারা জানান, নারীরাই বেশি কেনাকাটা করতে আসছেন। দেশি ও বিদেশি প্যাভিলিয়ন বাদে গয়না, মেকআপের সামগ্রী, মাথার কাঁটা, ক্লিপ, খোঁপা, কোরিয়ান ও চীন থেকে অনুপ্রাণিত পণ্য, চাবির রিং, আয়নাসহ সব ধরনের জিনিস কিনছেন। কয়েকটি দোকানে দেখা গেল নামীদামি ব্র্যান্ডের সুগন্ধির রেপ্লিকা। আছে আতরের স্টলও।
সংসারের টুকিটাকি
অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের ক্রোকারিজের দোকানে লোকসমাগম বেশি। সঙ্গে আছে মেলামিনের নানা রকম থালাবাসন। বাটি, থালা, গ্লাস, কড়াই, চামচ থেকে শুরু করে ননস্টিক কড়াই, কুকার, ওভেনসহ সংসারের টুকিটাকি অনেক রকম জিনিস এখানে মিলবে। কয়েকটি দোকান থেকে একটি পণ্য কিনলে অনেকগুলো বিনা মূল্যেও পাওয়া যায়।
খাবারের স্টলের কমতি নেই
খাদ্যদ্রব্যের স্টলের মধ্যে আচার ও শুকনা খাবারের স্টল সবচেয়ে বেশি। বিক্রি হচ্ছে পাঁপড়, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি মুখরোচক খাবার। তবে কোরিয়ান রেডি টু ইট নুডলস ও কাপ নুডলসের স্টলে ক্রেতার চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। প্রতিবারের মতো এবারও দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাবারের স্টল বসেছে। বিভিন্ন পণ্যের ওপর যেখানে থাকছে মূল্যছাড়।
কীভাবে যাবেন
পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলছে বিআরটিসির বিশেষ শাটল বাস। কুড়িল বিশ্বরোড, খেজুরবাগান (ফার্মগেট), নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে এগুলো ছাড়ছে। নির্দিষ্ট রুটগুলোয় যাত্রীদের আবার পৌঁছে দেবে এসব বাস। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ভাড়া ৩৫ টাকা। খেজুরবাগান (ফার্মগেট) থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০ টাকা। নারায়ণগঞ্জ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ টাকা। নরসিংদী থেকে ৯০ টাকা।