ঢাকার কুড়িল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পূর্বাচল নিউটাউনে বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) ২৯তম আসর। মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হবে আগামী ১লা জানুয়ারি। মেলা প্রাঙ্গণে হাতুড়ি পেটানোর ঠকঠক শব্দ চলছে। কোথাও চলছে করাত দিয়ে কাটাকাটি। কোথাও চলছে রঙ ও স্টল সাজসজ্জার কাজ। সবমিলিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে সর্বশেষ মুহূর্তের কাজ চলছে বলে জানান মেলা কমিটি। এই মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। মেলা শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনো স্টল বরাদ্দ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। গত ১লা নভেম্বর মেলার স্টল বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করে ইপিবি। তবে গত ২২শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলার কিছুসংখ্যক প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার রেস্টুরেন্ট, প্রিমিয়ার স্টল বরাদ্দ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। ফলে ওইদিন আবার নতুন করে স্টল বরাদ্দের সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইপিবি। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৬শে ডিসেম্বরের মধ্যে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো বরাদ্দের আবেদনের সময় বাড়ানো হয়। তবে এবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল–প্যাভিলিয়নও বরাদ্দের আগ্রহ কম দেখা গেছে। গত বছর ডিআইটিএফ’র ২৮তম আসরে বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির আদলে। তবে মেলায় এবার বঙ্গবন্ধু কর্নার থাকছে না। গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেলায় এবার স্থান পাচ্ছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ মো. আবু সাঈদ কর্নার ও শহীদ মুগ্ধ কর্নার। ইপিবি’র ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত দেশীয় ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের নামে তারা প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল বরাদ্দ দিয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ, নাভানা ফার্নিচার, নাদিয়া ফার্নিচার, ব্রাদার্স ফার্নিচার, রিগ্যাল ফার্নিচার, আবুল খায়ের কনজ্যুমার্স, আকিজ প্লাস্টিকস, যমুনা ইলেকট্রনিক অ্যান্ড অটোমোবাইলস, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ওয়ালটন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। ইপিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের সুযোগ আছে। প্রতিবছরই কিছু স্টল বরাদ্দ হয় না। যেগুলো একেবারে পেছনের দিকে থাকে, ওইগুলো। আমরা আশা করছি, অন্যান্য বারের মতো এবারও সাড়ে তিনশ’ স্টল–প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ হবে। মেলা প্রাঙ্গণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্টল–প্যাভিলিয়নের কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। মেলায় নিজেদের প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ তদারক করার সময় কথা বলেন দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের ম্যানেজার আখতারুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, মেলা শুরুর আগেই সব প্যাভিলিন–স্টল নির্মাণ হয়ে যাবে। প্রতিবছর এমনটাই দেখা যায়। একেবারে শেষদিকে এসে ২৪ ঘণ্টা ধরে নির্মাণের কাজ হয়। অন্যবারের চেয়ে এবার মেলা বেশি জমবে বলে আশা করেন রিপন। তিনি বলেন, জুলাই–আগস্টের ঘটনার কারণে মানুষ এক ধরনের ট্রমার মধ্যে রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশ পেলে এই ট্রমা দূর হবে। মানুষের কাছে আগের মতো টাকা–পয়সা নেই ঠিকই। তারপরও যাদের কাছে আছে, তাদের সংখ্যাও কম নয়। আশা করা যায়, বেচাকেনা খারাপ হবে না। জানা গেছে, দেশি পণ্যের বিশ্ববাজার ধরতে ১৯৯৫ সালে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মূল লক্ষ্য যাই থাক, এক স্থানে দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং বিদেশি পণ্য পাওয়া যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভিড় জমতো মেলা ঘিরে। তবে শহরের বাইরে এই মেলা চলে যাওয়ায় এই আয়োজন ঘিরে রাজধানীবাসীর আগের মতো আগ্রহ দেখা যায় না।
টানা ২৫ বার শেরে বাংলা নগরে হওয়ার পর তিন বছর আগে স্থান বদল করে পূর্বাচলে যায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। চলতি বছর ৭ই জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেলা শুরু হয় ২১শে জানুয়ারি। ওই মেলার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর ২৮তম বাণিজ্যমেলায় ৩০৪টি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল, যা তার আগের বছরের তুলনায় পণ্য বিক্রি বাড়ে ১৫ শতাংশ। এছাড়া গতবছরের মেলায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির আদেশ মেলে, যা ওই সময় দেশীয় মুদ্রায় ছিল প্রায় ৩৯২ কোটি টাকার সমান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৭.২৫ শতাংশ বেশি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২৫ উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। এবারো বাণিজ্যমেলায় যাওয়া– আসার সুবিধার্থে ঢাকার ফার্মগেট ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি’র বাসের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে ইপিবি।