একটি ক্ষেতের এক সারিতে বাঁধাকপি, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ। আবার অন্য ক্ষেতের একই সারিতে ফুলকপি, টমেটো, মিষ্টি লাউ। চন্দনাইশ–সাতকানিয়ার কৃষকরা সাথী ফসল হিসেবে এভাবেই চাষাবাদ শুরু করেছেন জমিতে। সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শঙ্খচরেও চলছে একই কায়দায় সবজি উৎপাদন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক চাষাবাদে সফল হচ্ছেন তারা। লাভও হচ্ছে প্রায় তিনগুণ। কৃষকরা এখন এক ফসলি চাষ থেকে সরে এসে সাথী ফসলে ঝুঁকছেন।
অথচ মাত্র ক’বছর আগেও কৃষকরা একই জমিতে এক ফসলি সবজি চাষ করতেন। বর্তমানে একই জমিতে একসঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ৩ থেকে ৪ রকমের সবজির চাষ করছেন। প্রায় সব কৃষক এখন সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে ধনেপাতা, টমেটো, মিষ্টি লাউ,ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, মুলা, আলু, ফেলন, কাঁচামরিচ, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করছেন। একই জমিতে একসঙ্গে ৩ থেকে ৪ রকমের সবজি চাষ হলেও ফসল উৎপাদনে তেমন সমস্যা হচ্ছে না বলে জানালেন কৃষকরা। কৃষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এক ফসলের জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়, তিন ফসলের জন্যও একই প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি লাভ হচ্ছে প্রায় তিনগুণ।’ চন্দনাইশের শঙ্খচরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমিতে সাথী ফসল চাষ করে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছেন শত শত কৃষক। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলের কৃষকরা জমিতে এক ফসলেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। আধুনিকতার এ যুগে কৃষকরা সেই পুরোনো ধ্যান–ধারণা পাল্টে একই জমিতে একই সঙ্গে চাষাবাদ করছেন ৩ থেকে ৪ ধরনের সবজি। কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাথী ফসলে তারা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। একটা ফসলে লোকসান হলে অপরটাতে সেটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।
সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শঙ্খচরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ আর সবুজ। কৃষকদের চাষাবাদ করা সাথী ফসলের ক্ষেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। একই জমিতে একসঙ্গে বেড়ে উঠছে ধনেপাতা, টমেটো ও মরিচ গাছ। আবার ফুলকপির সঙ্গে বেড়ে উঠছে কাঁচামরিচ, মিষ্টি লাউ। বেগুনের সঙ্গে বেড়ে উঠছে ধনেপাতা ও বরবটি। সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের কৃষক আবু বক্কর জানান, তিনি একই জমিতে তিন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এর মধ্যে ধনেপাতা তুলে বিক্রি করছেন। ধনেপাতা বিক্রির পরপর টমেটো ধরা শুরু করবে। ইতোমধ্যে তিনি একই ক্ষেতে ঝিঙা এবং মিষ্টি লাউ চাষ শুরু করেছেন। এভাবে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। এতে তার বীজ ছাড়া বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না। একই জমিতে একই সার প্রয়োগে ৩–৪ রকমের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ক্ষেতে তিনি কীটনাশক তেমন ব্যবহার করেন না। তবে নিয়মিত সাদা, কালো এবং লাল সার ব্যবহার করেন। বেশ ক’বছর ধরে এভাবে চাষ করে তারা সফলতা পেয়েছেন। চন্দনাইশ পৌরসভার হারলা গ্রামের কৃষক রশিদ আহমদ জানান, আলু ক্ষেতের জন্য জমি প্রস্তুত করে পাশাপাশি একই জমিতে কাঁচামরিচ ও ফেলনের বীজ রোপণ করেছেন। আলু তোলার পরপর ফেলন ও মরিচ ধরবে।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসাইন জানান, চলতি রবি মৌসুমে চন্দনাইশে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। প্রায় সব কৃষক এখন এক ফসলি চাষাবাদ থেকে সরে এসে সাথী ফসল হিসেবে ৩ থেকে ৪ রকমের সবজি চাষ করছেন। এতে তারা সফলও হচ্ছেন। সাথী ফসল চাষাবাদে কৃষকরা যাতে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মখীন না হন, তার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার ও কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম–কানুনসহ নিয়মিত নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।