মানুষ নিয়ে ভাবতে গেলে অথবা মানুষের সুকৌশলী নির্মাতা, যিনি নিপূণ হাতে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন, তার সাথে অবশ্যই সাধু পরামর্শ করতে হবে সৃষ্টির রহস্য নিয়ে। যেহেতু মানুষ নিজে নিজেকে সৃষ্টি করে নি, আপাত: দৃষ্টিতে যা সকলে প্রত্যক্ষ করে থাকে তা হলো, নর–নারীর যৌন বা জৈবিক মিলনের ফলে একটি শিশুর জন্ম হয়ে থাকে। সেই সূত্র ধরে বলা হলেও বলতে হবে উক্ত শিশুটি নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেনি; পিতা–মাতার যৌন মিলনের ফল হলো নবসৃষ্টি।
এবার আসুন, কালামের আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখি। খোদা সিদ্ধান্ত নিলেন, যেহেতু তিনি বরাবর অদৃশ্য এক রূহানী সত্ত¡া, তাই নিজেকে (জনসমক্ষে) প্রকাশ করার জন্য মানুষ সৃষ্টি করবেন। যেমন চিন্তা তেমন পদক্ষেপ; পৃথিবীর ধুলো নিয়ে একজন পুরুষ মানুষের আকৃতি দিলেন। তারপর তার নাশিকায় প্রাণ বায়ু ফুঁকে দিলেন, অমনি প্রজ্ঞাময় এক জীবন্ত মানুষ সৃষ্ট হলেন।
এ হলো মানুষ সৃষ্টির কিতাবী বর্ণনা: “তারপর আল্লাহ্ বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে–হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক।” পরে আল্লাহ্ তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে। আল্লাহ্ তাঁদের দোয়া করে বললেন, “তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে দুনিয়া ভরে তোলো এবং দুনিয়াকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর।” এর পরে আল্লাহ্ বললেন, “দেখ, দুনিয়ার উপরে প্রত্যেকটি শস্য ও শাক–সবজী যার নিজের বীজ আছে এবং প্রত্যেকটি গাছ যার ফলের মধ্যে তার বীজ রয়েছে সেগুলো আমি তোমাদের দিলাম। এগুলোই তোমাদের খাবার হবে। দুনিয়ার উপরের প্রত্যেকটি পশু, আসমানের প্রত্যেকটি পাখী এবং বুকে–হাঁটা প্রত্যেকটি প্রাণী, এক কথায় সমস্ত প্রাণীর খাবারের জন্য আমি সমস্ত শস্য ও শাক–সবজী দিলাম।” আর তা–ই হল। আল্লাহ্ তাঁর নিজের তৈরী সব কিছু দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই হল ষষ্ঠ দিন।” (পয়দায়েশ ১ : ২৬–৩১)।
মানুষ আসলেই এক অভিন্ন সৃষ্টি; যাদের দায়িত্ব হলো অদৃশ্য খোদার দৃশ্যমান বর্ণনা দান করা, যাদের জীবনাচরণ, বাকচারিতার গুণে বাতেনী খোদার বহিপ্রকাশ ঘটবে। প্রেম ও ক্ষমার পরাকাষ্ঠা একক মাবুদের বাস্তব পরিকল্পনার প্রমাণ হবে। নিত্যদিন মানুষ যে শান্তির কামনা করে চলে তা প্রতিষ্ঠা পেতে অবশ্যই প্রেম ও ক্ষমার পূর্ণাঙ্গ আবহ সৃষ্টি করতে হবে, ফলে পারষ্পরিক শান্তি ও সহমর্মীতা প্রতিষ্ঠা পাবে। খোদা যেক্ষেত্রে আজ্ঞা দিয়েছেন, পরষ্পরকে ক্ষমা ও প্রেম করতে; এমনকি, জানের শত্রুকেও প্রেম ও ক্ষমার বাধনে জড়িয়ে রাখতে। খোদা হলেন প্রেম ও ক্ষমার অফুরান আধার। যে কোনো অনুতপ্ত অপরাধী ব্যক্তি খোদার কাছে মাগফেরাত কামনা করে, অন্তর্যামী মাবুদ সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করেন, অধিকন্তু, ইতোমধ্যে উক্ত ব্যক্তির দ্বারা কৃত অপরাধগুলো মাবুদ সাগরের অতলে ডুবিয়ে দিয়ে থাকেন, যার ফলে পুরানো পাপের রেফারেন্স পর্যন্ত টানা সম্ভবপর আর থাকে না। খোদার নজরে এমনটাই হলো মানুষের মর্যাদা।
প্রিয় পাঠককুল, যেক্ষেত্রে মাবুদ নিজেই মানুষকে স্বীয় নয়নের মণি হিসেবে মনে করেন, তেমন ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আপনার মনোভাব কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে পারি কি? মানুষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে পূতপবিত্র হতে বা তেমন জীবন–যাপন করার জন্য অতীব যত্নবান থাকতে। বর্তমান পৃথিবী ক্লেদ কালিমায় পংকাবর্ত, আপনার কোথায় কোথায় যে পঙ্কের ছাপে নোংরা হয়ে আছে তা আপনিও বোধ করি জানেন না। খোদা নিজে তা জানে এবং এ কথাও স্বীকার করে থাকেন, স্নাত ব্যক্তির কেবল পা দু’টোই পরিষ্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। “ তখন শিমোন–পিতর বললেন, “হুজুর, তাহলে কেবল আমার পা নয়, আমার হাত আর মাথাও ধুইয়ে দিন।” ঈসা তাঁকে বললেন, “যে গোসল করেছে তার পা ছাড়া আর কিছুই ধোয়ার দরকার নেই, কারণ তার আর সব কিছু পরিষ্কার আছে ” (ইউহোন্না ১৩: ৯–১০)। অপরাধ প্রবণতা জন্ম নেয় এবং লালিত পালিত হয় কেবল হৃদয়ে, কারো হৃদয় যদি পবিত্র আত্মার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে তবে তার গোটা শরীর থাকে সুরক্ষিত।
অভিশপ্ত ইবলিশ হলো মানুষ ও খোদার চরম দুষমণ। শত্রুর কাজ হলো বিপক্ষের দুর্বলতম স্থানে আঘাত হানা। খোদার সাজানো বাগানে মানুষকে আর থাকতে দিল না, ছলেবলে কলা–কৌশলে তাদের প্রলুদ্ধ ও প্রতারিত করে শেষতক বিতাড়িত করে ছাড়লো। মানুষ খোদার নোমায়েন্দা না হলে হয়ে পড়লো কুলঙ্গার ইবলিসের ক্রীড়নক, বানিয়ে দেয়া হয়েছে বদ্ধ মাতাল, মানুষ হয়ে মানুষ কতল করা আজ তাদের জন্য যেন ধর্মীয় আজ্ঞা যাকে ‘জিহাদ’ নামে সাধারণ মানুষের কাছে সু–কৌশলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
যদিও খোদা হলেন রূহানী সত্ত্বা, যার ভজনা হতে হবে রূহে ও সত্যে। “আল্লাহ রূহ; যারা তাঁর এবাদত করে, রূহে ও সত্যে তাদের সেই এবাদত করতে হবে” (ইউহোন্না ৪ : ২৪)। কেবল বিশ্বাসের দ্বারাই খোদাকে গ্রহণ করতে হবে; কোনো পার্থীব দ্রব্যের বিনিময়ে তাঁকে আদৌ সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। বিশ্বের তাবৎ সৃষ্টি তাঁরই হাতে হয়েছে নির্মিত। অবশ্য মানুষ তারই হাতে তারই সুরতে তাঁর মহিমা প্রকাশার্থে তিনি সৃষ্টি করেছেন, যে কারণে মানুষের হৃদয় হলো খোদার আলয়।
সোভাগ্য বশত: কেবল ঈসা মসীহের মাধ্যমে জীবন্ত খোদাকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমরা পেয়েছি। ঈসা মসীহের গোটা জীবন (৩৩ বৎসর) প্রেম, ত্যাগ, ক্ষমা, ঐশি পবিত্রতা পরাক্রম ও বিশ্বপরিকল্পনা মসীহের মাধ্যমে দিবালোকের মতো প্রকাশ পেয়েছে। তাকে দর্শণ করার অর্থ অদৃশ্য খোদা দর্শণ।
এবার অতীব রহস্যপূর্ণ বিষয় হলো, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহ যেমন মানবদেহে আপন জীবন–যাপনের মাধ্যমে অদৃশ্য খোদার হুবহু জীবনাদর্শ প্রকাশ করেছেন মানুষের কাছ থেকেও তেমন জীবনাদর্শ প্রতিভাত হোক, যা হলো মসীহ ও খোদার একক অভিপ্রায়। আর সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য খোদা নিজেই সমস্ত ব্যবস্থা সুসপন্ন করেছন। কালামপাকে যথার্থ
বর্ণীত রয়েছে, “আল্লাহর রহমতে ঈমানের মধ্য দিয়ে তোমরা নাজাত পেয়েছ। এটা তোমাদের নিজেদের দ্বারা হয় নি, তা আল্লাহরই দান। এটা কাজের ফল হিসাবে দেওয়া হয় নি, যেন কেউ গর্ব করতে না পারে। আমরা আল্লাহর হাতের তৈরী। আল্লাহ মসিহ ঈসা সংগে যুক্ত করে আমাদের নতুন করে সৃষ্টি করেছেন যাতে আমরা সৎ কাজ করি। এই সৎ কাজ তিনি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, যেন আমরা তা করে জীবন কাটাই” (ইফিষীয় ২ : ৮–১০), “যদি কেউ মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আল্লাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আল্লাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেজন্যই আমরা মসিহের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আল্লাহ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসিহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আল্লাহর সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসিহের মধ্যে কোন গুনাহ ছিল না; কিন্তু আল্লাহ আমাদের গুনাহ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনাহের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসিহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আল্লাহর পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়” (২করিন্থীয় ৫ : ১৭–২১)।
মানুষের কোনো জৈবিক পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই তেমন ক্ষেত্রে। মানুষটিকে পাকরূহ নিজেই খোদ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাকে পরিচালনা করে থাকেন। হযরত পৌল তাই ঘোষণা দিয়েছেন আমাকে মসীহের সাথে ক্রুশে মেরে ফেলা হয়েছে। “আমাকে মসিহের সংগে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমি আর জীবিত নই, মসীহই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই শরীরে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ইবনুল্লাহর উপর ঈমানের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছি। তিনি আমাকে মহব্বত করে আমার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন।” (গালাতীয় ২ : ২০)। হযরত পৌলের অত্র ঘোষণার সাথে ঐকমত্যে এসে আমিও ঘোষণা দিতে চাই, ইতোমধ্যে আমার অবস্থা কোনোভাবেই ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না, যদিও এক দূরারোগ্য রোগে ভুগে চলছি তবুও আমার দ্বারা তিনি যা করার পরিকল্পনা করেছেন তাতে আমি শতভাগ একমত পোষণ করছি। আর তা হলো, জন্মসূত্রে আমি খোদার প্রতিনিধি, তাঁরই সুরতে এবং তাঁরই অবয়বে তাঁর অদৃশ্য গুনাবলি প্রকাশ্যে জনমানুষের কাছে প্রকাশ করা।
প্রাণ প্রিয় পাঠক, মসীহ হলেন মাটির দেহে পাকরূহ অর্থাৎ স্বয়ং খোদা, যেমন বর্ণনা রয়েছে, “প্রথমে কালাম ছিলেন, কালাম খোদার সাথে ছিলেন এবং কালাম নিজেই হলেন খোদা” (ইউহোন্না ১: ১–৫, ১২)। তিনি মানব দেহে হলেন আবির্ভুত। বাতেনি খোদার সার্বিক ক্ষমতা ও গুনাবলি তথা প্রেম ক্ষমা জনসমক্ষে প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করেছেন। সৃষ্টিলগ্নে খোদার চাওয়া পাওয়া ছিল, অর্থাৎ নিজের হাতে গড়া প্রথম মানুষটির দ্বারা কেবল স্বীয় প্রতিচ্ছবি যাকে ব্লুপ্রিন্ট বলা হয়ে থাকে তা প্রাঞ্জলভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরা। যে কেউ আদমকে দেখবে সেই খোদার দর্শণ লাভে হবে তৃপ্ত ও ধন্য। আমার একটি গাণের কলি তুলে দিলাম, “প্রভুর ছিলাম, প্রভুর হলাম, মাঝখানে দু’দিন জ্বলে পুড়ে মরলাম”। দেখা যায় জীবনের তৃতীয় ঘন্টা হলো পুনর্মিলনের ঘন্টা। যেহেতু খোদা হলেন অনন্ত প্রেম ও ক্ষমার নিরন্তন ফল্গুধারা, তাই আমরা যখন আমাদের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মাবুদের কাছে আন্তরিকভাবে ফরিয়াদ জ্ঞাপন করি, রাহমানুর রাহেমিন সাথে সাথে আমাদের সার্বিক ফরিয়াদ মঞ্জুর করে থাকেন। “আমি, আমিই আমার নিজের জন্য তোমার অন্যায় মুছে ফেলি; আমি তোমার গুনাহ্ আর মনে আনব না” (ইশাইয়া ৪৩ : ২৫)।
গোটা বিশ্ব অদ্যাবধি বেঁচে আছে কেবল খোদার অশেষ রহমতে। তিনি ক্রোধে ধির আর দয়াতে মহান। তিনি অপেক্ষায় থাকেন, যদি কেউ মন পরিবর্তন করে তাঁর কাছে এবং তাঁর কাছে ফিরে আসে, নতুন জীবন লাভ করে মাবুদের সাথে পুনর্মিলিত হবার অদম্য বাসনা পোষণ করে, অন্তযার্মী মাবুদ তাকে ক্ষমা করে পুনরায় নিজের ক্রোড়ে তুলে নেবার সার্বিক ব্যবস্থা কার্যকর করে থাকেন। (২করিন্থীয় ৫: ১৭–২১)।
আপনার কি জানা আছে, মানব মুক্তির স্বার্থে খোদার সেই পরিপূর্ণ নিখুঁত ব্যবস্থাটি কি? তিনি হলেন মানবরূপে জগতে আগত খোদার পাককালাম ও পাকরূহ, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসীহ। তিনিই হলেন বিশে^র পাপের কাফফারা পরিশোধ দেবার উপযুক্ত বেগুনাহ মেষ। তিনি গোটা বিশ্বের পাপভার স্বীয়স্কন্ধে বহন করে সলিবে আত্মকোরবানি দান করলেন। বিশ্ববাসির পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ হলো বেগুনাহ মসীহের আত্মকোরবানির মাধ্যমে, যারাই মসীহের দাতব্য কোরবানি নিজের পাপের কোরবানি হিসেবে বিশ্বাস পূর্বক কবুল করে নিয়েছেন, আজ তাদের মধ্যে অনন্ত সহায়, পাকরূহ হয়েছেন আবির্ভুত তারা হযরত পৌলের মত বলতে পেরেছে, আমি আর জীবিত নই, মসীহই আমার মধ্যে জীবিত থেকে আমাকে পরিচালনা করে চলছেন। “এই সব আল্লাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আল্লাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন।” (২করিন্থীয় ৫ : ১৮–১৯)।
মসীহ হলেন সম্পূর্ণ পাকরূহ এবং খোদার কালাম অর্থাৎ খোদা নিজেই, যার ফলে তিনি খোদার কুদরত প্রকাশ্যে জাহির করার ক্ষমতা রাখতেন। মৃতকে জীবন দান, প্রাকৃতিক ঝড় থামিয়ে দেয়া, জন্মান্ধ, কুষ্ঠ, অবশ রোগীকে মুখের কথায় সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা কেবল খোদার কাজ। তাছাড়া কারো পাপ ক্ষমা করে দেয়া কোনো মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। যেহেতু তিনি খোদার বহিপ্রকাশ তাই তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে সার্বিক এশি পরাক্রম কেবল মুখের কথায় সাধন করা। তিনি যখন বলেছেন, কেউ যদি আমার রক্ত মাংস না খায় তবে তার কোনো অনন্ত জীবন থাকতে পারে না। এমন কঠিন বক্তব্য ও গূঢ় রহস্য সাধারণ লোকজন শোনামাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে গেল এবং তাকে খোদাদ্রোহী আখ্যা দিয়ে হত্যা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। “ঈসা তাঁদের বললেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, ইবনে–আদমের গোশত ও রক্ত যদি আপনারা না খান তবে আপনাদের মধ্যে জীবন নেই। যদি কেউ আমার গোশত ও রক্ত খায় সে অনন্ত জীবন পায়, আর আমি শেষ দিনে তাকে জীবিত করে তুলব। আমা গোশতই হল আসল খাবার আর আমার রক্তই আসল পানীয়। যে আমার গোশত ও রক্ত খায় সে আমারই মধ্যে থাকে আর আমিও তার মধ্যে থাকি। জীবন্ত পিতা আমাকে পাঠিয়েছেন আর তাঁরই দরুন আমি জীবিত আছি। ঠিক সেভাবে যে আমাকে খায় সেও আমার দরুন জীবিত থাকবে। এ সেই রুটি যা বেহেশত থেকে নেমে এসেছে। আপনাদের পূর্বপুরুষেরা যে রুটি খেয়েও মারা গেছেন এ সেই রকম রুটি নয়। এই রুটি যে খাবে সে চিরকালের জন্য জীবন পাবে” (ইউহোন্না ৬ : ৫৩–৫৮)। তিনি গুনাহগার ব্যক্তিদের মুক্তি দানের জন্য যেভাবে অনুপ্রাণীত করতে চেয়েছেন আসলে তারা কথার মর্মার্থ কিছুই বুঝতে পারেনি। পাকরূহের শিক্ষা কেবল পাকরূহের দ্বারা ব্যখ্যাত হয়ে থাকে, তবে যার মধ্যে পাকরূহের অবস্থান নেই তেমন মাংসিক মানুষ কি করে রূহানী বিষয়ে মর্মার্থ অনুধাবন করবে। মানুষ মোহান্ধ হয়ে আছে কেবল দেহের কামনা, চোখের লোভ ও সাংসারিক বিষয়ের অদম্য আকর্ষণে। রূহানী বিষয় নিয়ে ভাববার সময় তাদের নেই। যে কারণে আজ তারা নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে মানুষ কতল করে ফিরছে। মসীহ হলেন খোদার জীবন্ত কালাম, খোদার কাছ থেকে না শুনে তিনি কিছুই বলতেন না, বিষয়টি যেমন: খোদা হলেন প্রমটার আর মসীহ হলেন ঘোষক যিনি লাউডস্পিকার। প্রমটার মৃদ্যু আওয়াজে যা কিছু বলে চলতেন মসীহ তাই প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে ফিরতেন, যেমনটা প্রত্যাশা করা হচ্ছে বর্তমানকার প্রত্যেকটি ঈমানদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে। আসলে প্রত্যেকটি বিশ্বাসি ব্যক্তির মধ্যে খোদা বসবাস করছেন, আর তিনি তাদেরকে নিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে ফিরছেন। মসীহ একবার বলেছিলেন, তিনি চুপ করে থাকলে পাথরগুলো চেঁচিয়ে ওঠবে। হযরত পৌল মনে হয় তেমনই এক চেঁচিয়ে ওঠা পাথর।
প্রিয় পাঠক, আপনি কি কোনো প্রেরণা পাচ্ছেন?