নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আনালিয়া খলিশাকুড়ি গ্রামের কৃষক লেকিন প্রামাণিক। এবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আতব ধান রোপণ করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে প্রায় ১১ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। কিন্তু ব্যাপক হারে শীষ নষ্ট হওয়ায় তিনি বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) আট থেকে ৯ মণ হারে ফলন পাচ্ছেন। একই অবস্থা কালীগ্রাম খন্দকারপাড়ার কৃষক জয়নাল খন্দকারের। তিনি বলেন, এবার ১১ বিঘা জমিতে আতব ধান রোপণ করেছেন। তবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষ নষ্ট হয়েছে। কীটনাশক দিয়েও লাভ হয়নি। বিঘাপ্রতি পাঁচ–ছয় মণ হারে ধান হতে পারে। কৃষক লেকিন ও জয়নালের মতো রাণীনগরে চলতি আমন মৌসুমে আতব ধানের শীষ নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। উপজেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরে যাওয়ায় ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৬ মণ হারে ফলন হয়, সেখানে এবার ছয় থেকে আট মণ ধান পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, একই জাতের ধান বারবার চাষ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। ভালো ফলন পেতে জাত পরিবর্তনের পরামর্শ তাদের।
কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করেছেন কৃষক। এর মধ্যে ধানী গোল্ড, বিনা–১৭, ব্রি ধান–৪৯, ব্রি ধান–৯০, স্বর্ণা এবং আতব ও চিনি আতব রয়েছে। কৃষকরা ব্রি–৩৪ জাতের আতব চাষ করেছেন প্রায় ৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর এবং চিনি আতব ১৩৩ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা জানান, ধানের চারা রোপণের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছ বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু শীষ বের হওয়ার পর থেকেই মরা রোগ দেখা দেয়। এসব প্রতিরোধে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক দিয়েও লাভ হয়নি। আতব ধান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য জাতের শীষ তুলনামূলকভাবে কম মরেছে। এ রোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
সিলমাদার গ্রামের কৃষক ছামিদুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রায় আট বিঘা জমিতে আতব ধানের আবাদ করেছেন। কয়েক বিঘা জমির ফসল কাটা হয়েছে। এতে ছয়–সাত মণ হারে ফলন পেয়েছেন। অথচ গত বছর ১৪ থেকে ১৬ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন হয়েছে। এবার ধানের শীষ মরে যাওয়ায় ফলন অর্ধেকেরও কম হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন, আতব ছাড়া অন্য ধানের তেমন সমস্যা হয়নি। ব্রি–৩৪ জাতের আতব ধানের শীষ মরে যাওয়ায় ফলন কমেছে। এ জাতের ধান কৃষকরা দীর্ঘ সময় ধরে চাষ করে আসছেন। একই জাত বারবার আবাদ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। ভালো ফলন পেতে জাত পরিবর্তনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।