এক সময়ের রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন এক গভীর অবহেলা ও ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুলিস্তানে অবস্থিত ১০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনটি বর্তমানে এমন এক অবস্থায় রয়েছে, যেখানে ঢুকতে তো দূরের কথা, এর সামনে দিয়ে চলাচল করাও যেন একটি বিপদজনক ব্যাপার। গত চার মাস ধরে যেখানে প্রবেশ করতে হলে দলীয় কর্মী বা নেতাদের লবিং করতে হতো, এখন সেখানে অবাধে প্রবেশ করা সম্ভব, কিন্তু পরিবেশের দুর্গন্ধ এবং অবস্থা দেখে মনে হয়, এটি এখন ‘পাবলিক টয়লেট‘-এ পরিণত হয়েছে।
ভবনের বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হয়, একটি ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। পোড়া দেয়ালগুলো ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টিলের নামফলকগুলোও তুলে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পূর্ব পাশের একটি ভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবনের ভেতর থেকে সব ধরনের মালপত্র বের করে নেওয়া হয়েছে। নিচতলায় এখনো আগুনে পোড়া ছাই, ভাঙা কাচ, পোড়া কাঠ এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ রয়েছে।
দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে মিশে রয়েছে পোড়া কাগজপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের টুকরো। আগুনে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র এবং ভাঙা কাচ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। ভবনের প্রতিটি তলায় মাদকের বোতলও দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পাওয়া গেছে যে, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা আর সেখানে আসেন না, ফলে মাদকসেবী এবং ছিন্নমূল মানুষদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
ভবনের নিচতলায় নিয়মিত মাদক সেবন করা হয়, এবং এটি এখন এক ধরনের পাবলিক টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা রিকশা চালিয়ে আসেন এবং পরিশ্রান্ত হলে এই ভবনের কোনো তলায় এসে বিশ্রাম নেন। মাঝে মাঝে খেলাধুলাও করা হয়। তাদের একজন সোলায়মান বলেন, ভবনটির সব আসবাবপত্র চুরি হয়ে গেছে, আর এখন কেউ কেউ ভবনের রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
একজন পথচারী শরীফুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ যেমন কর্ম করেছে, তেমনই ফল ভোগ করছে। এই ভবন থেকে তারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতনের পরিকল্পনা করতো, আর আজ তাদের অবস্থা দেখুন।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ছিল সুরক্ষিত না। ওই দিনই ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রায় সকল শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ঐ দিনই সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়, যা জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল।