রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক। স্বল্পমূল্যে সেখান থেকে পণ্য কিনতে সামনেই জমেছে বড়োসড়ো জটলা। এর মধ্যে কয়েকজন নারীকে দেখা গেল ভদ্রোচিত পোশাকে। কাছে গেলে উম্মে হাবীবা নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘আগে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে সংকোচ লাগত। মাস্ক পরে দাঁড়াতাম। ফাঁকফোকর পেলে জিনিসপত্র কিনতাম। কিন্তু এখন এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছি, লুকোচুরির সময় আর নেই। আমার মতো বহু মানুষ আছে আশপাশে। এখন সবাই একসঙ্গে আসি।’
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ওই স্থানে পণ্য বিক্রি শুরু করেন টিসিবির ডিলার মো. ফারুক। তিনি জানান, টিসিবির ট্রাক প্রতিদিন একই জায়গায় যায় না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডিলাররা ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেন। একজন ডিলার দিনে ৩৫০ জনকে দেওয়ার মতো পণ্য বরাদ্দ পান। তবে ট্রাক নিয়ে যাওয়ার পর প্রতিদিনই দেখা যায় আরও বেশি লোক দাঁড়িয়ে আছেন। উম্মে হাবীবা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, এখন তাঁর মতো মধ্যবিত্তরাও বাজার ছেড়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। টিসিবির পণ্য কিনে মাসে তাঁর প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকার মতো বাঁচে।
ওই লাইনেই ছিলেন নামকরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কাদির রহমান (ছদ্মনাম)। জানালেন, মাসে বেতন পান ২৭ হাজার টাকা। এই টাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে যদি বাজার থেকে পণ্য কিনতে হয়, তাহলে চলা অসম্ভব। তিনি সমকালকে বলেন, আমার বাসার পাশেই মালিবাগ বাজার। সেখানে জিনিসপত্রের এত দাম, আতঙ্কেই যাই না। ৫ থেকে ৬ মাস ধরে টিসিবির ট্রাক থেকেই বাজার করছি।
কাজে না গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন গৃহকর্মী কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, ‘কত তাড়াতাড়ি চাইল আর তেল নিয়া বাসায় যামু আর রানমু, সেইটা ভাবতাছি। দাঁড়ায়া আছি লাইনে তো সেই চাইর ঘণ্টা ধইরা। ছোট পোলাডারেও ঘরে একলা রাইখা আইছি।’ পণ্য হাতে পাওয়ার পর বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া বৃদ্ধ আজমলের চোখেমুখে দেখা গেল খুশির ঝিলিক। বললেন, টিসিবির পণ্য কিনতে সারাসপ্তাহ টাকা জমান তিনি। আজ এখানে ট্রাক আসবে শুনে সকাল ৮টা থেকে বসে আছেন। ট্রাক আসার পর ধাক্কাধাক্কিতে লাইনের একটু পেছনে পড়ে গেলেও পণ্য পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে।
টিসিবির ডিলার ফারুক জানান, তারা আজ ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও চাল নিয়ে এসেছিলেন। ক্রেতাপ্রতি ১০০ টাকা লিটার হিসাবে দুই লিটার ভোজ্যতেল, কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় দুই কেজি মসুর ডাল এবং ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল দিতে পেরেছেন। এ ছাড়া তারা আটা, আলু, পেঁয়াজও বিক্রি করেন। বর্তমান বাজারমূল্য ধরলে টিসিবির পণ্যের দাম প্রায় অর্ধেক।
তিনি বলেন, আগে নিম্নবিত্তরাই মূলত টিসিবির পণ্য কিনতেন। মধ্যবিত্তরা সংকোচে আসতেন না। তবে এখন উচ্চবিত্ত ছাড়া মোটামুটি সব শ্রেণিপেশার মানুষই আসছেন। টিসিবির ট্রাক দেখলেই তারা ছুটে আসেন। ফারুকের সহকারী রঞ্জু জানান, ট্রাক আসার দুই–তিন ঘণ্টা আগেই লাইন শুরু হয়ে যায়। রোদ–বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষ লাইনে দাঁড়ায়। তারা লাইন ঠিক রাখার পাশাপাশি একই ব্যক্তি একাধিকবার পণ্য নিচ্ছেন কিনা তাও খেয়াল রাখেন। ৫০ জনকে দেওয়ার মতো পণ্য থাকা অবস্থায় বাকিদের ফিরে যেতে বলা হয়।