‘মাটির একটা দালান ঘর আছিল। ঢলের পানিতে সে ঘর ভাইংগা গেছে। তিন দিন ধইরা স্ত্রী ও ছোট নাতিন লইয়া দোহান (দোকান) ঘরের ভিটিতে (সিমেন্ট দিয়ে বানানো চৌকি) থাকতাছি। ভিটির নিচ দিয়া ঢলের পানি যায়। সেইটাও নড়বড়ে হইয়া গেছে। কিন্তু আর কোথাও যাওয়ার জাগা নাই। এহানেই কষ্ট কইরা ঘুমাই। বিছানাপত্র ভিজা। এভাবে কি ঘুম আসে?’
কথাগুলো বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব সেকান্দার আলী। তাঁর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পিপুলেশ্বর গ্রামে। পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় সেকান্দার আলীর ঘর ভেঙে গেছে। বর্তমানে স্ত্রী ও ছোট নাতনিকে নিয়ে টিনের তৈরি দোকানঘরে কোনোমতে দিন পার করছেন এই বৃদ্ধ।
রোববার দুপুরে দোকানে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট দোকানঘরটির ভেতর মালপত্রে ঠাসা। তার ভেতর জবুথবু হয়ে বসে আছেন সেকান্দার, তাঁর স্ত্রী ও নাতনি। দোকানের চারপাশে পানি।
সেকান্দার আলী জানান, সামান্য ভিটামাটি ছাড়া তাঁর তেমন কিছু নেই। চার ছেলে বিয়ে করে যার যার আলাদা সংসার। গ্রামে নিজ ভিটার সঙ্গে রাস্তার পাশে একটি দোকান রয়েছে। দোকানের আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। গত শুক্রবার থেকে পানিবন্দি থাকায় রান্নাবান্না, খাওয়া–দাওয়া প্রায় বন্ধ। পয়ঃনিষ্কাশনের মতো অবস্থা নেই। সেই সঙ্গে সুপেয় পানির অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। আশপাশের অনেক লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে উঠলেও বাড়ির পাশে দোকানঘরে থেকে গেছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। বাড়ির পাশে তাঁর এক ছেলের ছোট একটা পাকা ঘর রয়েছে। সেই ঘরের মেঝেতেও পানি উঠেছে। তা ছাড়া ওই ছোট ঘরে ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতি থাকায় তিনি স্ত্রী ও এক নাতনিকে নিয়ে দোকানেই থাকছেন। আরেকটু পানি বাড়লে সেখানেও থাকা যাবে না।
রান্না কীভাবে হয়– জানতে চাইলে দোকানের ভেতরে থাকা টেবিলের ওপর একটি গ্যাসের চুলা দেখিয়ে সেকান্দার বলেন, এই চুলাতে কোনোরকমে একটু রান্না করা হয়। মাঝেমধ্যে চিড়ামুড়ি খেয়ে দিন কাটাই। ত্রাণের সহযোগিতা বলতে একবার শুধু শুকনো খাবার পেয়েছিলাম।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রানা জানান, উপজেলায় ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে বেশি।