ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টান্ন ছানামুখী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মিষ্টান্ন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই–৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ‘ছানামুখী’ মিষ্টান্নকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির রেজিস্টারের কাছে ১০ পৃষ্ঠার একটি আবেদন পাঠান। সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের প্রদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, জেলা তথ্য বাতায়নে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে উল্লেখ আছে এই ছানামুখীর নাম। ছানামুখীর উৎপত্তি ব্রিটিশ রাজত্বকালে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এক কেজি ছানামুখী তৈরিতে গাভির সাত–আট লিটার দুধ লাগে। প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম ৭০০ টাকা।
জেলা শহরের আদর্শ মাতৃভান্ডারের দুলাল চন্দ্র পাল বলেন, ‘৭ থেকে ৮ লিটার দুধের সঙ্গে এক কেজি চিনি দিয়ে তৈরি হয় এক কেজি ছানামুখী। ছানামুখী তৈরির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে গাভির দুধ জ্বাল দিতে হবে। এরপর গরম দুধ ঠাণ্ডা করে ছানায় পরিণত করতে হবে। অতিরিক্ত পানি ঝরে যাবে এমন একটি পরিচ্ছন্ন টুকরিতে ছানা রাখতে হবে। পরে ওই ছানাকে কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে সব পানি ঝরে যায়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলে ছানা শক্ত হবে। শক্ত ছানাকে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরায় কাটতে হবে। এরপর চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে তাতে পানি, চিনি ও এলাচি দিয়ে ফুটিয়ে শিরা তৈরি করতে হবে। এরপর ছানার টুকরাগুলো চিনির শিরায় ছেড়ে নাড়তে হবে। সব শেষে চিনির শিরা থেকে ছানার টুকরাগুলো তুলে একটি বড় পাত্রে রাখতে হবে। ওই পাত্রকে খোলা জায়গা বা পাখার নিচে রেখে নেড়ে শুকাতে হবে। এতেই প্রস্তুত হয়ে যাবে ছানামুখী।’
আদর্শ মাতৃভান্ডারের মালিক রাখাল মোদকের ছেলে দুলাল চন্দ্র মোদক বলেন, ‘ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মানেই জেলার জন্য সম্মানজনক সংবাদ। আমরা খুশি। অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। দেশের বাইরে নিয়মিত ছানামুখী যাচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিং এর আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।’